পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৩৮ o রবীন্দ্র-রচনাবলী হয় চলিয়া যাইবে । প্রাদেশিকতা কথিত ভাষায় অাছে সত্য, কিন্তু এই প্রাদেশিকতাগুলি কি আলোচ্য নহে । আমারও চেষ্টা আছে এবং পরিষৎও চেষ্টা করিতেছেন। সমস্ত প্রাদেশিক শব্দ সংগ্ৰহ করিতে পারিলে, ভাষার অভিধানাদি কি পূর্ণাবয়ব হইবে না। আমি তো বলিয়াছি, আমি এই প্রদেশের শব্দ লইয়াই আলোচনা করিয়াছি । আমার কার্য স্বতন্ত্র নহে, আমি পরিষদের চেষ্টাকেই অগ্রসর করিয়া দিতেছি । সংস্কৃত শব্দসকল বাংলায় ব্যবহারে বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের সহিত আমার মতভেদ নাই। বিদ্যাভূষণ মহাশয় বলেন, ধ্বন্তাত্মক শব্দগুলি পরিবর্তনশীল, কিন্তু আমারু বিশ্বাস এগুলি সহজে পরিবর্তনীয় নহে। বড়ে। বড়ো কথাগুলির অর্থ, ভাব ও ব্যবহারই পরিবর্তিত হইয়া থাকে। সংস্কৃত অনেক শব্দ বাংলায় পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে, তাহার উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে। ধ্বন্যাত্মক শব্দ পরিবর্তিত হইবে কেন। বাঙালি কি খিল খিল করিয়া হাসিবে না, প্যান প্যান করিয়া কাদিবে না, ঘ্যান ঘ্যান করিয়া চাহিবে না ? প্রাকৃত বাংলা লিখিত ভাষায় যে আমি চালাইতে চাহি, তাহা নহে ; তবে চলিবে কি না, তাহীদের প্রয়োজন হইবে কি না বা আছে কি না, তাহার বিচারক পাঠকগণ । পরিশিষ্টের ‘প্রাকৃত ও সংস্কৃত’ প্রবন্ধটি সম্পাদকীয় মন্তব্যরূপে বঙ্গদর্শনে ( ১৩০৮) প্রকাশিত হয়। শ্ৰীনাথবাবুর প্রবন্ধে যে-উদাহরণের কথা রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করিয়াছেন নিম্নে তাহা উদ্ধৃত হইল : • •।৬০ বৎসর পূর্বে যে-সকল বাংলাপুস্তক লিখিত হইয়াছে, তাহাতে পর্যন্ত বাংলাকে প্রাকৃত বলা হইয়াছে। যথা – শনির মাহাত্ম্য আছে স্কনা-পুরাণেতে, পরীকৃত বিনে কেহ ন পারে বুঝিতে। অতএব পয়ার প্রবন্ধে তাহ বলি, একচিত্তে শুন সবে শনির পাচালী । (পূর্ববঙ্গে প্রচলিত শনির পাঁচালী ) বাবু দীনেশচন্দ্র সেনও তাহার বঙ্গভাষা ও সাহিত্য' নামক পুস্তকে বলিতে বাধ্য হইয়াছেন, “পুর্বে ভারতের কথিত ভাষামাত্রই, বোধহয়, প্রাকৃত-সংজ্ঞায় অভিহিত হইত এবং এইরূপ বাংলাভাষাকেও প্রাকৃত বলিত। যথা— ভারতের পুণ্যকথা শ্রদ্ধ। দূর নহে। “পরীকৃত' পদবন্ধে রাজেন্দ্রদাসে কহে । (২• • দুইশত বৎসরের প্রাচীন হস্তলিখিত সঞ্জয়কৃত মহাভারত) "১ ‘বিবিধ’ প্রধানত ১৩০৮ সালের বৈশাখ ও আষাঢ়ের বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত মাসিকসাহিত্য-সমালোচনা হইতে সংকলিত হইয়াছে। ১ ভাষাতত্ত্ব সম্বন্ধে আলোচনা —শ্ৰীনাথ সেন। বঙ্গদর্শন, ১৩০৮ আষাঢ়, পৃ. ১৩৫।