পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঁাশরি S ዓ¢ বঁাশরি। ও যে আইডিয়ালিস্ট ! বাস রে ! এতবড়ো ভয়ংকর জীব জগতে নেই। আফ্রিকার অসভ্য মারে মানুষকে নিজে খাবে বলে । এরা মারে তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় । খায় না খিদে পেলেও । বলি দেয় সারে সারে, জেঙ্গিসখার চেয়ে সর্বনেশে । ক্ষিতীশ । সন্ন্যাসীর ‘পরে তোমার মনে মনে ভক্তি আছে বলেই তোমার ভাষা এত তীব্ৰ । বাঁশরি। যাকে-তাকে ভক্তি করতে না পেলে বীচে না যে-সব হাংলা মেয়ে আমি তাদের দলে নই গো । রাজরানী যদি হতুম মেয়েদের চুলে দড়ি পাকিয়ে ওকে দিতুম ফাঁসি । কামিনীকাঞ্চন ছোয় না যে তা নয়, কিন্তু তাকে দেয় ফেলে ওর কোন-এক জগন্নাথের রথের তলায়, বুকের পােজর যায় ওঁড়িয়ে । ক্ষিতীশ । ওর আইডিয়াটা কী জানা চাই তো । বঁাশরি । সে আছে বাওয়ান্ন বঁাও জলের নীচে । তোমার এলাকার বাইরে, সেখানে তোমার মন্দাকিনী-পদ্মাবতীর ডুবর্সাতার চলে না। আভাস পেয়েছি কোন ডাকঘর-বিবর্জিত দেশে ও এক সংঘ বানিয়েছে, তরুণতপস্যসংঘ, সেখানে নানা পরীক্ষায় মানুষ তৈরি হচ্ছে। ক্ষিতীশ । কিন্তু, তরুণী ? বাঁশরি । ওর মতে গৃহেই নারী, কিন্তু পথে নয় । ক্ষিতীশ । তা হলে সুষমাকে কিসের প্রয়োজন । বঁাশরি । অন্ন চাই-যো । মেয়েরা প্রহরণধারিণী না হােক বেড়িহাতা-ধারিণী তো বটে । রাজভাণ্ডারের চাবিটা থাকবে ওরই হাতে । ঐ-যে ওরা বেরিয়ে আসছে, অনুষ্ঠান শেষ হল বুঝি । পুরন্দর ও অন্য সকলে বেরিয়ে এল ঘর থেকে পুরন্দর । (সোেমশংকর ও সুষমাকে পাশাপাশি দাড় করিয়ে) তোমাদের মিলনের শেষ কথাটা ঘরের দেয়ালের মধ্যে নয়, বাইরে, বড়ো রাস্তার সামনে । সুষমা। বৎসে, যে সম্বন্ধ মুক্তির দিকে নিয়ে চলে তাকেই শ্রদ্ধা করি । যা বেঁধে রাখে পশুর মতো প্ৰকৃতির-গড়া প্রবৃত্তির বন্ধনে বা মানুষের-গড়া দাসত্বের শৃঙ্খলে ধিক তাকে । পুরুষ কর্ম করে, স্ত্রী শক্তি দেয় । মুক্তির রথ কর্ম, মুক্তির বাহন শক্তি । সুষমা, ধনে তোমার লোভ নেই, তাই ধনে তোমার অধিকার । তুমি সন্ন্যাসীর শিষ্যা, তাই রাজার গৃহিণীপদে তােমার পূর্ণতা । (ডান হাতে সােমশংকরের ডান হাত ধরে) । তস্মাৎ ত্বমুত্তিষ্ঠ যশোলভস্ব জিত্বা শক্রন ভুঙক্ষুে রাজ্যং সমৃদ্ধম। ওঠে তুমি যশোলাভ করো। শক্রদের জয় করে- যে রাজ্য অসীম সমৃদ্ধিবান তাকে ভোগ করো। বৎস, আমার সঙ্গে আবৃত্তি করো প্ৰণামের মন্ত্র । নমঃ পুরস্তাদ অর্থ পৃষ্ঠতন্তে নমোস্তুতে সর্বত এবং সর্ব । অনন্তবীর্যামিতবিক্রমসত্বং সৰ্বং সমাগ্লোষি ততোহসি সর্বঃ । তোমাকে নমস্কার সম্মুখ থেকে, তোমাকে নমস্কার পশ্চাৎ থেকে, হে সর্ব, তোমাকে নমস্কার সর্ব দিক থেকে । অনন্তবীৰ্য তুমি, অমিতবিক্রম তুমি, তোমাতেই সর্ব, তুমিই সর্ব। ক্ষণকালের জন্য যবনিকা পড়ে তখনই উঠে গেল । তখন রাত্রি, আকাশে তারা দেখা যায়। সুষমা ও তার বন্ধু নন্দা । সুষমা। এইবার সেই গানটা গা দেখি ভাই ।