পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

阿贾@瓦 WO66 “তোমার ভোগে রুচি নেই- কিন্তু মণির বয়স অল্প, তাই-” “ও কথা বলিস নে, ও কথা বলিস নে । ধনসম্পদ দিতে চাস দে, কিন্তু ভোগ করা-” ‘कन , (डांकों कझाव ना, भांनेि ।” “না গো না, পারবে না, পারবে না ! আমি বলছি, ওর মুখে রুচিবে না ! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে, কিছুতে কোনো রস পাবে না ।” যতীন চুপ করিয়া রহিল। তাহার অভাবে সংসারটা মণির কাছে একেবারে বিস্বাদ হইয়া যাইবে, এ কথা সত্য কি মিথ্যা, সুখের কি দুঃখের, তাহা সে যেন ভাবিয়া ঠিক করিতে পারিল না । আকাশের তারা যেন তাহার হৃদয়ের মধ্যে আসিয়া কানে কানে বলিল, “এমনিই বটে- আমরা তো হাজার হাজার বছর হইতে দেখিয়া আসিলাম, সংসার-জোড়া এই সমস্ত আয়োজন এত-বড়োই ফাকি ৷” 9s G. " “কম কী দিয়ে যােচ্ছ, বাছা । এই ঘরবাড়ি টাকাকড়ির ছল ক'রে তুমি ওকে যে কী দিয়ে গেলে তার মূল্য ও কি কোনােদিন বুঝবে না। যা তুমি দিয়েছ তাই মাথা পেতে নেবার শক্তি বিধাতা ওকে দিন, এই আশীর্বাদ ওকে করি।” “আর একটু বেদনার রস দাও, আমার গলা শুকিয়ে এসেছে। মণি কি কাল এসেছিল- আমার ঠিক মনে পড়ছে না ।” “এসেছিল। তখন তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে। শিয়রের কাছে বসে বসে অনেকক্ষণ বাতাস করে তার পরে ধোবাকে তোমার কাপড় দিতে গেল।” “আশ্চর্য! বোধ হয় আমি ঠিক সেই সময়েই স্বপ্ন দেখছিলুম, যেন মণি আমার ঘরে আসতে চাচ্ছে— দরজা অল্প—একটু ফাক হয়েছে- ঠেলাঠেলি করছে কিন্তু কিছুতেই সেইটুকুর বেশি আর খুলছে না । কিন্তু, মাসি, তোমরা একটু বাড়াবাড়ি করছ— ওকে দেখতে দাও যে আমি মরছি— নইলে মৃত্যুকে হঠাৎ সইতে পারবে না।” “বাবা, তোমার পায়ের উপরে এই পশমের শালটা টেনে দিই,- পায়ের তোলো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে ।” “না, মাসি, গায়ের উপর কিছু দিতে ভালো লাগছে না ।” “জনিস, যতীন ? এই শালটা মণির তৈরি, এতদিন রাত জেগে জেগে সে তোমার জন্যে তৈরি করছিল । কাল শেষ করেছে ।” যতীন শালটা লইয়া দুই হাত দিয়া একটু নাড়াচাড়া করিল। মনে হইল পশমের কোমলতা যেন মণির মনের জিনিস ; সে যে যতীনকে মনে করিয়া রাত জাগিয়া এইটি বুনিয়াছে, তাহার মনের সেই প্রেমের ভাবনাটি ইহার সঙ্গে গাথা পড়িয়াছে। কেবল পশম দিয়া নহে, মণির কোমল আঙুলের স্পর্শ দিয়া ইহা বোনা । তাই মাসি যখন শালটা তাহার পায়ের উপর টানিয়া দিলেন তখন তাহার মনে হইল, মণিই রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া তাহার পদসেবা করিতেছে । “কিন্তু, মাসি, আমি তো জানতুম, মণি সেলাই করতে পারে না- সে সেলাই করতে ভালোই বাসে की ।” “মন দিলে শিখতে কতক্ষণ লাগে । তাকে দেখিয়ে দিতে হয়েছে- ওর মধ্যে অনেক ভুল সেলাইও আছে ।” “তা, ভুল থাক-না। ও তো প্যারিস একজিবিশনে পাঠানো হবে না- ভুল সেলাই দিয়ে আমার পা ঢাকা বেশ চলবে ।” সেলাইয়ে যে অনেক ভুল-ত্রুটি আছে সেই কথা মনে করিয়াই যতীনের আরো বেশি আনন্দ হইল । বেচারা মণি পারে না, জানে না, বার বার ভুল করিতেছে, তবু ধৈৰ্য্য ধরিয়া রাত্রির পর রাত্রি সেলাই করিয়া চলিয়াছে— এই কল্পনাটি তাহার কাছে বড়ো করুণ, বড়ো মধুর লাগিল। এই ভুলে-ভরা শালটাকে আবার সে একটু নাড়িয়া-চাড়িয়া লইল ।