পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

م ど br ববীন্দ্ৰ --রচনাবলী তোমাদেব নেই ।” এব। ফল ফলছে- আব্ব রাগ কবছি ফলের উপরে, বীজ বপনের উপরে নয় । যখন বঙ্গবিভাগের সাংঘাতিক প্ৰস্তাব নিযে বাঙালিব চিত্ত বিক্ষুব্ধ তখন বাঙালি অগতা ব্যযকট-নীতি অবলম্বন কবতে চেষ্টা করেছিল । বাংলাব সেই দুর্দিনের সুযোগে বোম্বাই-মিলওযালা নির্মমভাবে তাদের মূনাফাব অঙ্ক বাডিয়ে তুলে আমাদের প্রাণপণ চেষ্টাকে প্রতিহত করতে কুষ্ঠিত হন। নি । সেইসঙ্গে দেখা গেল, বাঙালি মুসলমান সেদিন আমাদেব থেকে মুখ ফিরিয়ে দাড়ালেন ; সেই যুগেই বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমানে লজ্জাজনক কুৎসিত কাণ্ডের সত্রপাত হল । অপবাধটা প্রধানত কোন পক্ষের এবং এই উপদ্রব অকস্মাৎ কোথা থেকে উৎসাহ পেলে, সে তর্কে প্ৰযোজন নেই । আমাদের চিন্তা করবার বিষযটা হচ্ছে এই যে, বাংলা দ্বিখণ্ডিত হলে বাঙালিজাতের মধ্যে যে পঙ্গতাব সৃষ্টি হত সেটা বাংলাদেশের সকল সম্প্রদাযেব এবং বস্তুত সমস্ত ভারতবর্ষেবই পক্ষে অকল্যাণকার, এটা যথার্থ দাবাদ দিয়ে বোঝবার মতো একাত্মতা আমাদেব নেই বলে সেদিন বাঙালি হিন্দুর বিরুদ্ধে অনাত্মীয় অসহযোগিতা সম্ভব হয়েছিল । রাষ্ট্রপ্রতিমার কাঠামো গডবাব সময় এ কথাটা মনে রাখা দাবকাব | নিজেকে ভোলানোর ছলে বিধাতাকে ভোলাতে পারব না | এই ব্যাপারে সেদিন অনেকেই রাগারগি করেছিলেন । কিন্তু ফুটাে কলসিতে জল তুলতে গেলে জল যে পড়ে যায়, তা নিয়ে জলেব উপরে বা কলসির উপবে চোখ রাঙিযে লাভ কী ! গরজ আমাদের যতই থাক, ছিদ্রটা স্বভাবত ছিদ্রের মতোই ব্যবহার কবৰে । কলঙ্ক আমাদেবই আর সে কলঙ্ক যথাসময়ে ধরা পডবেই, দৈবের কৃপায় লজা-নিবারণ হবে না । কথা হয়েছে, ভারতবর্ষে একরাষ্ট্রশাসন না হয়ে যুক্তরাষ্ট্রশাসননীতির প্রবর্তন হওয চাই । অর্থাৎ একেবারে জোডের চিহ্ন থাকবে না। এতটা দূর মিলে যাবার মতো ঐক্য আমাদের দেশে নেই, এ কথাটা মেনে নিতে হয়েছে । আমাদের বাষ্ট্রসমস্যাব এ একটা কেজো রকমের নিম্পত্তি বলে ধরে নেওযা যাক । কিন্তু তবু একটা কঠিন গ্রস্তি রয়ে গেল, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ভেদ ও বিরোধ | এই বিচ্ছেদটা নানা কারণে আন্তরিক হয়ে দাড়িয়েছে । বাইরে থেকে বাষ্ট্রনৈতিক প্রলেপ দিয়ে এর ফাটল নিবাবণ কবা চলবে না , কোনো কারণে একটু তাপ বেড়ে উঠলেই আবার ফাটল ধরবে । যেখানে নিজেদের মধ্যে সত্যকার ভেদ সেখানেই রাষ্ট্রিক ক্ষমতার হিস্যা নিয়ে স্বতন্ত্র কোঠায় স্বতন্ত্র হিসাব চলতে থাকে । সেখানে রাষ্টিক সম্পদে সকলেরই অখণ্ড স্বার্থের কথাটা স্বভাবতই মনে থাকে না । এমন দুগ্ৰহে একই গাডিকে দুটাে ঘোড়া দু দিকে টানবাব মুশকিল বাধায় । এখন থেকেই অধিকাবের ভাগ-বখরা নিয়ে হট্টগোল জেগেছে । রাষ্ট্রনৈতিক বিষয়বুদ্ধির যোগে গোল-টেবিল পেন্বিয়েও এই গোল উত্তরোত্তব বাড়বে বৈ কমবে এমন আশা আছে কি ! বিষয়বুদ্ধির আমলে সহোদব ভাইদের মধ্যেও বাচসা বেধে যায । শেষকালে গুণ্ডাদের হাতেই লাঠিসডকির যোগে যমের দ্বারে চরম নিম্পত্তির ভার পড়ে । একদল মুসলমান সম্মিলিত নির্বাচনেব বিরুদ্ধে, তারা স্বতন্ত্র নির্বাচনরীতি দাবি করেন এবং তঁদের পক্ষের ওজন ভারী করবার জন্যে নানা বিশেষ সুযোগেৰ বাটখারা বাড়িয়ে নিতে চান | যদি মুসলমানদের সবাই বা অধিকাংশ একমত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনরীতির দাবি করেন এবং নিজেদের পক্ষের ওজন বাডিয়ে নিতে চান, তা হলে এমনতরো দাবি মেনে নিয়েও আপিস করতে মহাত্মাজি বাজি আছেন বলে বোধ হল । তা যদি হয, তার প্রস্তাব মাথা পেতে নেওয়াই ভালো । কেননা, ভাবতবর্ষের তরফে রাষ্ট্রিক যে অধিকার আমাদের জয় কবে নিতে হবে তাব সুস্পষ্ট মূর্তি এবং সাধনাব প্ৰণালী সমগ্রভাবে তারই মনে আছে । এপর্যন্ত একমাত্র তিনিই সমস্ত ব্যাপারটাকে অসামান্য দক্ষ তার সঙ্গে প্রবল বাধার বিরুদ্ধে অগ্রসব করে এনেছেন ! কাজ-উদ্ধারেব দিকে দৃষ্টি বাখলে শেষ পর্যন্ত তারই হাতে সারথ্যভার দেওয়া সংগত । তবু, একজনের বা একদলের ব্যক্তিগত সহিষ্ণুতার প্রতি নির্ভর করে এ কথা ভুললে চলবে না যে, অধিকার-পরিবেশনে কোনো এক পক্ষের প্রতি যদি পক্ষপাত করা হয় তবে সাধারণ মানবপ্রকৃতিতে সেই অবিচার সইবে না, এই নিয়ে একটা অশান্তি নিয়তই মারমুখো হয়ে থেকে যাবে । বস্তুত এটা পরস্পরের বিবাদ মেটাবার পস্থা নয় । সকলেই যদি একজোট হয়ে প্ৰসন্নমনে