পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় QO (ł ~ পডছে কীটসের কবিতা, না-দেখা নাইটেঙ্গেলের না-শোনা সুরে ব্যথিয়েছে তাদের বুকের পাজর, হৃদযবাতায়নেব ঝরোেকা খুলে গেছে ফেনায়িত সমুদ্রের জনশূন্যতায় উজাড় কোন পরীস্থানে । অনিলবাবু, তোমার সঙ্গে শুভদৃষ্টির লগ্ন ছিল সেই আলো-আঁধারের ঝিকিমিকিতে ; তখন কত দিন দুলেছে কত ঘরের কোণে তোমার কলামূর্তি তরুণীর আর্তচিত্তের রহস্যদোলায় ! তার পরে দেখি, দেখতে দেখতে সেই মেয়েদের সময় বয়ে যায়। এসে পড়ে যুগান্তর, ছেড়া মোজা সেলাইয়ের, নতুন বাজারে সওদা করতে পাঠাবার ফর্দ লেখার, চায়ের সভার হাটুজল বন্ধুত্বের । আমার ভাগ্যে রোম্যানসের ঘনসজল আষাঢ়ে দিন তখনো ফুরোয় নি— সেই রসাভিষিক্তি বাদল-বেলায় আলাপ হল তোমার সঙ্গে । অচেনাকে চেনা হল শুরু রোমাঞ্চিত মনে । চেনার প্রথম অধ্যায়েই ধরা পড়ল তুমি একেবারেই দুর্লভ নও । মায়ার টান তো দেখি আমাদেবীই দিকে । লক্ষ্যসন্ধানের আগেই ধরা পড়বার মতো তোমার ভাব । এত সহজ মৃগয়ায় পরীক্ষাই হয় না ব্যাধের গুণপনার । উলটে গেল পালা । পথ চেয়ে বসেছিলুম। ধরা দেব বলে, ধরবার খেলা হল শুরু । দুঃখ এই তুমি দুর্লভ নও । হায় আমার রাজপুত্র, একটু স্পর্শ লাগতেই তোমার মুকুট পড়ল। খসে ধুলোয় আমার পায়ের কাছে, সংকোচে চাইলুম পা সরিয়ে নিতে— তুমি বললে, থাক থাক । সেদিন আমার ফান্দ পাতা ছিল বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে— কীলকণ্ঠের কাকলিতে, মান-অভিমানের ছলনায়, অকারণ হাসির কল্লোলে । রসে রঙে এ ঘরের বেড়াজাল ছিল। ঠাসবুন্নুনি করা । তুমি তোমার দিগ্নিজয়ী চালের মন্থর ভঙ্গীতে পা ফেললে ঠিক তার মাঝখানটাতে । বারে বারে চেয়ে দেখলুম কটাক্ষে, মনে মনে হাসলুম তোমার দুই চক্ষুর বিহবলতায় । কোন ফাকে এসে পড়ল আর-এক মায়াবিনী— রাণিতা । আমরা এক ব্যবসায়ের ব্যবসায়িনী । দেখলুম তার ফাসটাতে অল্প—একটু টান দিতেই বন্দী তখনি এক দিক থেকে আর-এক দিকে পড়ল হেলে । ভোজের বাহুল্যে ওর ক্ষুধা হয়েছিল অলস, সেই শিথিল অবস্থায় পথ্য ছিল তড়িদবেগে এক চুমুকের সুধারাস । সেটা বুঝে নিয়েছিল যাদুকরী ! / বোধ হয় জান না মেয়েতে মেয়েতে বাজি রাখা পণ আছে ভিতরে ভিতরে । রাণিত এল আমার দরজায় । আমার মুখে সে চাইলে, আমি চাইলুম তার মুখে ; পাশা ফেলল। তার হাতের এক ঘুরুনিতেই, এক দানেই হল জিত ! তুমি গেলে চলে, মনেও পডল না একটা সামানা রকম অছিলায় করে যেতে | হাসতে চেষ্টা করি সঙ্গিনীরা যখন শুধায় হল কী । রাণিতাকেও একদিন জবাব দিতে হবে ঐ প্রশ্নেরই শুকনো হাসি দিয়ে । বেশি দেরি নেই । পালা ফুরল, এবার প্যাক করতে হবে । অনাহুত সাহায্য করতে এল রমেশ– ঐটুকুই তার লাভ | লেগে গেল আস্তিন গুটিয়ে ! কাচের শিশি মুন্ডতে লাগল খবরের কাগজে, কিছু বা জড়িয়ে দিল ছেড়া মোজায় । চামড়ার বাক্সোয় সাবধানে সাজিয়ে দিলে হাত-আয়না, রুপোর বাধানো চিরুনি, নখ-কাটা কঁচি, চুলের তেল, ওটেনের মলম, পাউডারের কীেটো, সাবানের বাটি । অবসাদের ভারে অচল ছিল আমার মন, গা লাগছিল না কিছুতে হাত লাগাতে, কেবল বসে বসে ছিডছিলুম কুটিকুটি ক’রে পুরনো চিঠিগুলো । ব্যবহাবি-করা শাড়িগুলো নানা নিমন্ত্রণদিনের ফিকে গন্ধ মিলিয়ে দিল ঘরের হাওয়ায় { সেগুলো বিছিয়ে বিছিয়ে দুই হাতে চেপে চেপে পাট করে দিতে অসম্ভব সময় নিচ্ছিল। রমেশ । আমার জরির-কাজ-কবা স্লিপারের এক-একটা পাটি নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মুছে দিচ্ছিল কেঁচার কাপড়ে, কোনো আবশ্যক ছিল না । চৌকির উপর দাড়িয়ে দেয়াল থেকে সে খসিয়ে নিল ছবিগুলো । মোটা কাপেটটা গুটিয়ে-সুটিয়ে