পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনুবাদ-চর্চা VOD) Գ Օ বোধ হয় স্পানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের সময়েই এই কথাটি স্পষ্টরূপে স্বীকৃত হইতে আরম্ভ হয় যে, মাছি আন্ত্রিক জ্বরের বাহন এবং সেইজন্য বিপৎসস্কুল। এক্ষণে ইহা সাধারণত স্বীকৃত হইয়াছে যে, কেবলমাত্ৰ আন্ত্রিক জ্বর নহে, পরন্তু সান্নিপাতিক জ্বর এবং ওলাউঠার বীজ এবং সম্ভবত শিশু-উদরাময় প্রভৃতি অন্যান্য রোগের বীজও মাছি ছড়াইয়া দিতে পারে। ইহাও জানা গিয়াছে যে, মাছি যক্ষ্মাবীজাণুও বহন করে। যেখানে ইহাদের জননযোগ্য স্থান এবং রোগবীজের সংস্পৰ্শ-সম্ভাবনা আছে, মাছি সেখানেই অত্যন্ত ভয়ংকর রোগবিস্তারক হইয়া উঠে। Dr. Hindle দেখিয়াছেন বাতাসের উজানে যাইবার অথবা তাহা পার হইয়া যাইবার দিকেই মাছির ঝোক । বৃষ্টিহীন দিন এবং উত্তাপ তাহদের ছড়াইয়া পড়িবার পক্ষে অনুকুল, এবং খোলা পাড়াগায়ে মাছিরা শহরের চেয়ে বেশি দূরে ভ্ৰমণ করে, সম্ভবত তাহার কারণ এই যে, শহরে বাড়িগুলি তাহাদিগকে খাদ্য এবং আশ্রয় দিয়া থাকে। AS পীত নদীর তীরবর্তী হোনান শানটুং এবং শান্সিতে যাহাঁদের আদি বাসস্থান সেই উত্তর দেশীয় চৈনিকেরা কানটুং এবং ফুকিয়েন –নিবাসী দক্ষিণচৈনিকদের হইতে সম্পূৰ্ণ পৃথক জীব। উত্তরদেশীয়ের সাধারণত বৃহদায়তন; ইহারা সকল ঘটনাই অবিচলিতভাবে গ্রহণ করে, এবং গাৰ্হস্থ্য কিংবা রাষ্ট্র-সম্বন্ধীয় কোনো বাধা নিয়মের পরিবর্তনের বিরোধী। দক্ষিণদেশীয়েরা সাধারণত আয়তনে খাটো, উত্তরের লোকদের চেয়ে তাহদের বর্ণ কালো, এবং তাহারা সহজে উদবেজিত হয়। ইহারা পুরাতন প্রথা-সম্বন্ধে অসহিষ্ণু এবং তাঁহাদের উদীচ্য স্বজাতীয়েরা যে সতর্ক গণ্ডির মধ্যে সন্তুষ্ট ইহারা তাহা ভেদ করিয়া আপনাদিগকে অভিব্যক্তি করিয়া তুলিতে চেষ্টা করিতেছে। Գ Հ এ দিকে আহার সম্বন্ধে ইহাদের উভয়ের রুচি স্পষ্টতই পৃথক ; উত্তরচৈনিকেরা প্রবল-শীতপ্রধান-দেশীয় লোক, এইজন্য যে তাণ্ডুল দক্ষিণদেশীয়দের পক্ষে অত্যাবশ্যক তাহাকে তাহারা উপেক্ষা করে এবং ময়দা ও গোধূমজাত অন্যান্য পদার্থ খাইয়াই প্ৰধানত বাচিয়া থাকে। দক্ষিণবাসীদের দেশ এত গরম যে, গুরুপাক খাদো তাহদের বিতৃষ্ণা; তাহারা ভুট্ট এবং স্নিগ্ধকর শাক-সবজি কিছুতে ছাড়িতে চায় না। কিন্তু দক্ষিণাদেশীয়দের প্রতি উত্তর দেশীয়দের ঈর্ষাই বিরোধের সকলের চেয়ে প্রধান কারণ। দক্ষিণ প্রদেশগুলি অপেক্ষাকৃত অধিক পরিমাণে আধুনিক অবস্থার সংস্পর্শে আনীত হইয়াছে এবং এইজন্য যে যথেচ্ছাচারী শাসন উদীচাদের প্রায় প্রকৃতিগত, তাহার Գ Տ) ভ্ৰমণ করিয়া তাহদের উদীচী প্রতিবেশীদের চেয়ে অধিকতর আধুনিক ভাবাপন্ন হইয়াছে, এবং উত্তরদেশীয় যে স্বৈরশাসকগণ তাহদের আকাঙক্ষা সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ ও সংশয়পর তাহদের কর্তৃক উত্তরের রাজধানী হইতে শাসিত হওয়া, ইহারা ঘূণার সহিত দেখে। তাহা ছাড়া, তাহারা চারি দিকে তাকাইলে দেখিতে পায় যে, উত্তর প্রদেশে প্রভূত পরিমাণে রেলোয়ে পাতা হইয়াছে, অথচ যে দক্ষিণ প্রদেশ সর্বাপেক্ষা বহুপ্ৰসূ। সেখানে রেলোয়ে অল্প এবং বাণিজ্য ব্যাবসা সেকেলে বহুশ্রমসাধ্য এবং যাতায়াতের অব্যবস্থাবশত প্ৰতিহত।