পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভিন সঙ্গী রবিবার আমার গল্পের প্রধান মানুষটি প্রাচীন ব্রাহ্মণপণ্ডিত-বংশের ছেলে। বিষয়ব্যাপারে বাপ ওকালতি ব্যবসায়ে অঁাটি পর্যন্ত পাকা, ধর্মকর্মে শাক্ত আচারের তীব্র জারক রসে জারিত। এখন আদালতে আর প্র্যাকটিস করতে হয় না। এক দিকে পূজা-অৰ্চনা আর-এক দিকে ঘরে বসে আইনের পরামর্শ দেওয়া, এই দুটোকে পাশাপাশি রেখে তিনি ইহকাল পরকালের জোড় মিলিয়ে অতি সাবধানে চলেছেন। কোনো দিকেই একটু প ফসকায় না। এই রকম নিরেট আচারবাধা সনাতনী ঘরের ফাটল ফুড়ে যদি দৈবাং কাটাওয়াল নাস্তিক ওঠে গজিয়ে, তা হলে তার ভিত-দেয়াল-ভাঙা মন সাংঘাতিক ঠেলা মারতে থাকে ইটকাঠের প্রাচীন গাথুনির উপরে। এই আচারনিষ্ঠ বৈদিক ব্রাহ্মণের বংশে দুর্দান্ত কালাপাহাড়ের অভু্যদয় হল আমাদের নায়কটিকে নিয়ে। তার আসল নাম অভয়াচরণ। এই নামের মধ্যে কুলধর্মের যে ছাপ আছে সেট। দিল সে ঘষে উঠিয়ে। বদল ক'রে করলে অভীককুমার। তা ছাড়া ও জানে যে প্রচলিত নমুনার মানুষ ও নয়। ওর নামটা ভিড়ের নামের সঙ্গে হাটে-বাজারে ঘেঁষাৰ্ঘেষি করে ঘর্মাক্ত হবে সেটা ওর রুচিতে বাধে । অভীকের চেহারাটা আশ্চর্য রকমের বিলিতি ছাদের । আঁট লম্ব দেহ গৌরবণ চোখ কটা, নাক তক্ষু, চিবুকটা ঝুকেছে যেন কোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভঙ্গিতে। আর ওর মুষ্টিযোগ ছিল অমোঘ, সহপাঠীরা যারা কদাচিৎ এর পাণিপীড়ন সহ করেছে তারা একে শতহস্ত দূরে বর্জনীয় বলে গণ্য করত। • ছেলের নাস্তিকতা নিয়ে বাপ অম্বিকাচরণ বিশেষ উদবিগ্ন ছিলেন না। মস্ত র্তার নজির ছিল প্রসন্ন ন্যায়রত্ন, তার আপন জেঠামশায়। বৃদ্ধ ন্যায়রত্ব তৰ্কশাস্ত্রের গোলন্দাজ, চতুষ্পাঠীর মাঝখানে বসে অকুস্বার-বিসর্গওয়ালা গোলা দাগেন ঈশ্বরের অস্তিত্ববাদের উপরে। হিন্দুসমাজ হেসে বলে ‘গোল খ৷ ডালা, দাগ পড়ে ন} সমাজের পক প্রাচীরের উপরে। আচারধর্মের খাচাটাকে ঘরের দাওয়ায় দুলিয়ে রেখে