পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eyు রবীন্দ্র-রচনাবলী নেয় না। আকাশ পেরিয়ে আলো আসতে সময় লাগে, সেকথা পূর্বে বলেছি। বৈদ্যুতিক শক্তিরাও ঢেউ খেলিয়ে আসে আকাশের ভিতর দিয়ে। কিন্তু অনেক পরীক্ষা করেও মহাকর্ষের বেলায় সে রকম সময় নিয়ে চলার প্রমাণ পাওয়া যায় না। তার প্রভাব তাৎক্ষণিক । আরও একটা আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আলো বা উত্তাপ পথের বাধা মানে কিন্তু মহাকর্ষ তা মানে না। একটা জিনিসকে আকাশে ঝুলিয়ে রেখে পৃথিবী আর তার মাঝখানে যত বাধাই রাখা যাক না তার ওজন কমে না। ব্যবহারে অন্য কোনো শক্তির সঙ্গে এর মিল পাওয়া যায় না। অবশেষে আইনস্টাইন দেখিয়ে দিলেন এটা একটা শক্তিই নয়। আমরা এমন একটা জগতে আাছি যার আয়তনের স্বভাব অনুসারেই প্রত্যেক বস্তুই প্রত্যেকের দিকে বুকতে বাধ্য। বস্তুমাত্র যে-আকাশে থাকে তার একটা বাকানো গুণ আছে, মহাকর্ষে তারই প্রকাশ । এটা সর্বব্যাপী, এটা অপরিবর্তনীয়। এমনকি আলোককেও এই বাকা বিশ্বের ধারা মানতে হয়। তার নানা প্রমাণ পাওয়া গেছে। বোঝার পক্ষে টানের ছবি সহজ ছিল কিন্তু যে নূতন জ্যামিতির সাহায্যে এই বাক আকাশের ক্টোক হিসেব ক’রে জানা যায় সে কজন লোকেরই বা আয়ত্তে আছে। যাই হোক ইংরেজিতে যাকে গ্র্যাভিটেশন বলে তাকে মহাকর্ষ না ব’লে ভারাবর্তন নাম দিলে গোল চুকে যায়। আমাদের এই যে নাক্ষত্রজগৎ, এ যেন বিরাট শূন্ত আকাশের দ্বীপের মতো। এখান থেকে দেখা যায় দূরে দূরে আরও অনেক নাক্ষত্রদ্বীপ। এই দ্বীপগুলির মধ্যে সব চেয়ে আমাদের নিকটের যেটি, তাকে দেখা যায় অ্যাও মিডা নক্ষত্র দলের কাছে। দেখতে একটা ঝাপসা তারার মতো। সেখান থেকে যে আলো চোখে পড়ছে সে যাত্র করে বেরিয়েছে ন লক্ষ বছর পূর্বে। কুগুলীচক্র-পাকানো নীহারিক আরও আছে আরও দূরে। তাদের মধ্যে সব চেয়ে দূরবর্তীর সম্বন্ধে হিসাবে স্থির হয়েছে যে, সে আছে তিন হাজার লক্ষ আলো-বছর দুরত্বের পথে। বহুকোটি নক্ষত্র-জড়ো-করা এইসব নক্ষত্ৰজগতের সংখ্যা একশো কোটির কম হবে না। একটা আশ্চর্যের কথা উঠেছে এই যে কাছের দুটো তিনটে ছাড়া বাকি নক্ষত্ৰজগৎগুলো আমাদের জগতের কাছ থেকে কেবলই সরে চলেছে। যেগুলি যত বেশি দূরে তাদের দৌড়ীবেগও তত বেশি। এইসব নক্ষত্ৰজগতের সমষ্টি নিয়ে যে বিশ্বকে আমরা জানি, কোনো কোনো পণ্ডিত ঠিক করেছেন সে ক্রমশই ফুলে উঠছে। স্বতরাং যতই ফুলছে ততই নক্ষত্রপুঞ্জের পরম্পরের দুরত্ব যাচ্ছে বেড়ে। যে-বেগে