পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రివ রবীন্দ্র-রচনাবলী এক সর্বনাশী প্রলয়কাও ঘটবে। এ তে গড়ে তোলবার কথা। কিন্তু বস্তু ধ্বংস করতে তার চেয়ে অনেকগুণ তীব্র শক্তির প্রয়োজন। প্রোটনে ইলেকট্রনে যদি সংঘাত বাধে তা হলে স্বতন্ত্র কিরণ বিকিরণ ক’রে তখনই তা’র মিলিয়ে যাবে। এতে যে প্রচণ্ড তেজের উদ্ভব হয় তা কল্পনাতীত । i এইরকম কাগুটাই ঘটছে নক্ষত্রমণ্ডলীর মধ্যে । সেখানে বস্তধ্বংসের কাজ চলছে বলেই অম্বুমান করা সংগত। এই মত অনুসারে স্বৰ্ষ তিনশো ষাট লক্ষ কোটি টন ওজনের বস্তুপুঞ্জ প্রত্যহ খরচ করে ফেলছে। কিন্তু স্বর্যের ভাণ্ডার এত বৃহৎ যে আরও বহু বহু কোটি বৎসর এইরকম অপব্যয়ের উদামত চলতে পারবে । কিন্তু বর্তমান বিশ্বের আয়ু সম্বন্ধে যে শেষহিসেব অবধারিত হয়েছে সেটা মেনে নিলে বস্তু-ভাঙনের চেয়ে বস্তু-গড়নের মতটাই বেশি খাটে। যদি ধরে নেওয়া যায় যে একসময়ে সূর্য ছিল হাইড্রজেনের পুঞ্জ, তা হলে সেই হাইড্রজেন থেকে হীলিয়ম গড়ে উঠতে যে তেজ জাগবার কথা সেটা এখনকার হিসাবের সঙ্গে মেলে। ■ অতএব এই বিশ্বজগৎটা ধ্বংসের দিকে, না গ’ড়ে ওঠবার দিকে চলছে, না জুই একসঙ্গে ঘটছে সে সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের মতের মিল হয় নি। কয়েক বৎসর হল যেবিকীরণশক্তি ধরা পড়েছে যার নাম দেওয়া হয়েছে কসমিক রশ্মি ; সেটার উদ্ভব ন৷ পৃথিবীতে না স্বর্ষে, এমনকি না নক্ষত্ৰলোকে । নক্ষত্রপরপারের কোনো আকাশ হতে বিশ্বস্বষ্টির ভাঙন কিংবা গড়ন থেকে সে বেরিয়ে পড়েছে এইরকম আন্দাজ করা হয়েছে। f যাই হোক, বিশ্বস্বষ্টি ব্যাপারের এই যে সব বিপরীত বার্তাবহ-ইশারা আসছে বিজ্ঞানীদের পরীক্ষাগারে সেটা হয়তে কোনো-একটা জটিল গণনার ব্যাপারে এসে ঠেকবে । কিন্তু আমরা তো বিজ্ঞানী নই, বুঝতে পারি নে হঠাৎ অঙ্কের আরম্ভ হয় কোথা থেকে, একেবারে শেষই বা হয় কোনখানে। সম্পূর্ণ-সংঘটিত বিশ্বকে নিয়ে হঠাৎ কালের আরম্ভ হল আর সদ্যোলুপ্ত বিশ্বের সঙ্গে কালের সম্পূর্ণ অন্ত হবে, আমাদের বুদ্ধিতে এর কিনার। পাই নে। বিজ্ঞানী বলবেন, বুদ্ধির কথা এখানে আসছে না, এ হল গণনার কথা ; সে গণনা বর্তমান ঘটনাধারার উপরে প্রতিষ্ঠিত— এর আদি-অস্তে যদি অন্ধকার দেখি তা হলে উপায় নেই।