পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বপরিচয় । 8s७ উপসংহার একদা জগতের সকলের চেয়ে মহাশ্চর্ম বার্তা বহুক্ত করে বহুকোটি বৎসর পূর্বে তরুণ পৃথিবীতে দেখা দিল আমাদের চক্ষুর অদৃপ্ত একটি জীবকোষের কণা। কী মহিষার ইতিহাস সে এনেছিল কত গোপনে দেহে দেহে অপরূপ, শিল্পসম্পদশালী তার স্বীকার্য নব নব পরীক্ষার ভিতর দিয়ে অনবরত চলে আসছে "যোজনা করবার, শোধন করবার, অতি জটিল কৰ্মতন্ত্র উদভাবন ও চালনা করবার বুদ্ধি প্রচ্ছন্নভাবে তাদের মধ্যে কোথায় আছে, কেমন করে তাদের ভিতর দিয়ে নিজেকে সক্রিয় করেছে, উত্তরোত্তর অভিজ্ঞতা জমিয়ে তুলছে, ভেবে তার কিনারা পাওয়া যায় না। অতিপেলববেদনাশীল জীবকোষগুলি বংশাবলীক্ৰমে যথাযথ পথে সমষ্টি বাধছে জীবদেহে, নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ; নিজের ভিতরকার উদ্যমে জানি না কী করে দেহক্রিয়ার এমন আশ্চর্য কর্তব্যবিভাগ করছে। যে কোষ পাকুঘরে, তার কাজ এক রকমের, যে কোষ মস্তিষ্কের, তার কাজ একেবারেই অন্ত রকমের। অথচ জীবাণুকোষগুলি মূলে একই। এদের দুরূহ কাজের ভাগ-বাটোয়ার হল কোন হুকুমে এবং এদের বিচিত্র কাজের মিলন ঘটিয়ে স্বাস্থ্য নামে একটা সামঞ্জস্য সাধন করল কিসে। জীবাণুকোষের দুটি প্রধান ক্রিয়া আছে, বাইরে থেকে খাবার জুগিয়ে বাচা ও বাড়তে থাকা, আর নিজের অনুরূপ জীবনকে উৎপন্ন করে বংশধারা চালিয়ে যাওয়া। এই আত্মরক্ষা ও বংশরক্ষার জটিল প্রয়াস গোড়াতেই এদের উপর ভর করল কোথা থেকে। t অপ্রাণ বিশ্বে যেসব ঘটনা ঘটছে তার পিছনে আছে সমগ্র জড়জগতের ভূমিকা। মন এইসব ঘটনা জানছে, এই জানার পিছনে মনের একটা বিশ্বভূমিকা কোথtr+ পাথর লোহা গ্যাসের নিজের মধ্যে তো জানার সম্পর্ক নেই। এই দুঃসাধ্য প্রশ্ন নিয়ে । বিশেষ একটা যুগে প্রাণ মন এল পৃথিবীতে— অতিক্ষুদ্র জীবকোষকে বাহন করে। পৃথিবীতে স্বাক্ট-ইতিহাসে এদের আবির্ভাব অভাবনীয়। কিন্তু সকলকিছুর সঙ্গে সম্বন্ধহীন একান্ত আকস্মিক কোনো অত্যুৎপাতকে আমাদের বুদ্ধি মানতে চায় না। আমরা জড়বিশ্বের সঙ্গে মনোবিশ্বের মূলগত ঐক্য কল্পনা করতে পারি সর্বব্যাপী তেজ বা জ্যোতিঃ-পদার্থের মধ্যে। অনেক কাল পরে বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে আপাতদৃষ্টিতে যে-সকল স্থল পদার্থ জ্যোতিহীন, তাদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন-আকারে নিত্যই জ্যোতির ক্রিয়া চলছে। এই মহাজ্যোতিরই সূক্ষ্ম বিকাশ প্রাণে এবং আরও যুক্তর বিকাশ চৈতন্তে ও মনে। বিশ্বস্বষ্টির আদিতে মহাজ্যোতি ছাড়া আর কিছুই যখন পাওয়া যায় না, তখন বলা যেতে পারে চৈতন্তে তারই প্রকাশ। জড় থেকে জীবে একে একে