পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ર রবীন্দ্র-রচনাবলী চুড়িওয়াল এল চুড়ি বিক্রি করতে, প্রকৃতি চুড়ি কিনতে চাইতেই চুড়িওয়ালাকে সবাই সতর্ক করে দিলে। চণ্ডালিকা মনের দুঃখে তার স্বষ্টিকর্তাকে ধিক্কার দিলে। প্রকৃতির মা মায়ার প্রবেশ । ঘরের কাজে চণ্ডালিকার ঔদাসীন্য নিয়ে তাকে ভৎসনা করতেই, ম৷ তাকে অপমানের মধ্যে জন্ম দিয়েছে বলে তাকে তিরস্কার করলে। ম৷ বিস্মিত হয়ে চলে গেল। বুদ্ধদেবের শিষ্য আনন্দ এসে জল চাইলেন। তার হাতের জল অশুচি বলে চণ্ডালিক সংকোচ প্রকাশ করলে। আনন্দ বললেন, “যে জল তুষিতের তৃষ্ণ দূর করে, তাপিতের তাপ শাস্ত করে, সেই জলই শুচি।” তিনি জল খেয়ে চলে গেলেন। তার করুণা ও তার রূপে প্রকৃতির মন মুগ্ধ হয়ে গেল পাড়ার মেয়ের ধানকাটার কাজে ওকে ডাকতে এল । ও বললে, “আমায় ডেকে না আমায় ডেকে না— আমার কাজভোল৷ মন আছে দূরে কোন করে স্বপনের সাধন ॥” विडौग्न झुक्क 疆靜 বুদ্ধের পূজার অর্ঘ্য নিয়ে পথ দিয়ে চলে গেল পূজারিনীরা। প্রকৃতি এসে গাইলে, “ফুল বলে ধন্য আমি, ধন্য আমি মাটির পরে— দেবতা ওগো তোমার পূজা আমার ঘরে ॥” মা এসে বললে, “তুই অবাক করলি যে, উমার মতো তুই তপস্যা করছিস নাকি । তোর সাধন কার জন্যে ।” চণ্ডালিকা বললে, “যে আমাকে আহবান করলে, তার জন্যে । আমি ছিলুম বাণীহারা, যে আমাকে বাণী দিয়েছে, আমার মনের মধ্যে যে বাজিয়ে দিয়ে গেছে ‘জল দাও, তার জন্যে ।” মা বললে, “তোর কাছে কে আবার জল চাইলে, সে কি তোর আপন লোক নাকি।” প্রকৃতি বললে, “তিনি বলেছেন, তিনি আমার আপন লোকই বটেন। তিনি আমাকে নব জন্ম দিয়েছেন। মন্ত্র পড়ে তুই নিয়ে আয় ভিক্ষুকে এই অমানিতার পাশে, আমি তাকে আত্মনিবেদনের সম্মান দেব।” এত বড়ো স্পর্ধার কথা শুনে মা স্তম্ভিত হয়ে গেল। এমন সময় ভিক্ষুর দল নিয়ে আনন্দ পথ দিয়ে চলে গেলেন। তার দিকে তাকালেন না দেখে চণ্ডালিকার অসহ ক্ষোভ হল। মা বললে, “মন্ত্র পড়ে আমি ওঁকে আনবই ।” তার শিষ্যাদের সঙ্গে সম্মোহন নৃত্য করে কন্যার হাতে একটা মায়াদর্পণ দিলে। বললে, “এই দর্পণ নিয়ে যখন তুই নাচবি দেখতে পাবি তার কী দশ হচ্ছে।”