পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রভাতসংগীত a শতেক কোটি গ্রহ তারা যে স্রোতে তৃণপ্ৰায় সে স্রোত-মাঝে অবহেলে ঢালিয়া দিব কায়, অসীম কাল ভেসে যাব অসীম আকাশেতে। জগৎ-কলকলরব শুনিব কান পেতে । দেখিব ঢেউ- উঠে ঢেউ, দেখিব মিশে যায়, জীবন-মাঝে উঠে ঢেউ মরণ-গান গায় । দেখিব চেয়ে চারি দিকে, দেখিব তুলে মুখ— কত-না। আশা, কত হাসি, কত-না সুখ দুখ, বিরাগ দ্বেষ ভালোবাসা, কত-না হয়-হায়— তপন ভাসে, তারা ভাসে, তারাও ভেসে যায় । কত-না যায়, কত চায়, কত—না কাদে হাসে —— আমি তো শুধু ভেসে যাব, দেখিব চারি পাশে । অবোধ ওরে, কেন মিছে করিসি ‘আমি আমি | উজানে যেতে পারিবি কি সাগরপথগামী ? জগৎ—পানে যাবি নে রে, আপনা—পানে যাবিসে যে রে মহামরুভূমি, কী জানি কী যে পাবি ৷ মাথায় করে আপনারে, সুখ-দুখের বোঝা, ভাসাতে চাস প্রতিকৃলে— সে তো রে নহে সোজা । অবশ দেহ, ক্ষীণ বল, সঘনে বহে শ্বাস, লইয়া তোর সুখদুখ এখনি পাবি নাশ । জগৎ হয়ে রব আমি, একেলা রহিব না | মরিয়া যাব একা হলে একটি জলকণা | আমার নাহি সুখ দুখ, পরের পানে চাই— যাহার পানে চেয়ে দেখি তাহাই হয়ে যাই । তপন ভাসে, তারা ভাসে, আমিও যাই ভেসে— তাদের গানে আমার গান, যেতেছি এক দেশে । প্ৰভাত সাথে গাহি গান, সাঝের সাথে গাই, তারার সাথে উঠি আমি— তারার সাথে যাই । ফুলের সাথে ফুটি আমি, লতার সাথে নাচি, বায়ুর সাথে ঘুরি শুধু ফুলের কাছাকাছি । মায়ের প্রাণে স্নেহ হয়ে শিশুর পানে ধাই, দুখীর সাথে কঁাদি। আমি সুখীর সাথে গাই । সবার সাথে আছি। আমি, আমার সাথে নাই, জগৎ-স্রোতে দিবানিশি ভাসিয়া চলে যাই ।