পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

22N | দ্বিতীয় । সন্ন্যাসী । প্রকৃতির প্রতিশোধ ওই তরুতলে বসে আমরা দুজনে কত রাত্রি জোছনাতে কথা কহিয়াছি। মনে যেন রেখো, সখা, সুদূর প্রবাসে পুরাতন এ বন্ধুরে ভুলিয়ো না যেন । দেবতা রাখুন। সুখে, আর কী কহিব । [প্ৰস্থান আহা, যেতে যেতে দোহে চায় ফিরে ফিরে, অশ্রুজালে ভালো করে দেখিতে না পায় । বিপুল জগৎ-মাঝে দিগন্তের পানে সখা ওর কোথা গেল, কে জানে কোথায় ! এ কী সংশয়ের দেশে রয়েছি আমরা, চোখের আড়ালে হেথা সবি অনিশ্চয় । বারেক যে কাছ হতে দূরে চলে গেল হয়তো সে কাছে ফিরে আর আসিবে না । তাই সদা চোখে চোখে রেখে দিতে চাই, তাই সদা টেনে নিই বুকের মাঝেতে । কোথা কে অদৃশ্য হয় চারি দিক হতে, আরো যেন দৃঢ় করে ধরি। জড়াইয়া । সবাই চলিয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন দিশে, অসীম জগতে মোরা কে কোথায় থাকি, মাঝে লোক-লোকাস্তের ব্যবধান পড়ে । তবু কি গলায় দিবি মোহের বন্ধন ! সুখ দুঃখ নিয়ে তবু করিবি কি খেলা ! যে রবে না। তবু তারে রাখিবারে চাস ! ওরে, আমি প্ৰতিদিন দেখিতেছি, যেন কে আমারে অবিরত আনিতেছে টেনে । জগৎ-চক্রের মাঝে যেতেছি পড়িতেচারি দিকে জড়াইছে অশ্রুর বঁাধন, প্ৰতিদিন কমিতেছে চরণের বল । যাক ছিড়ে ! গেল ছিড়ে ! চল ছুটে চল ! চল দূরে- যত দূরে চলে রে চরণ । কে ও আসে অশ্রুনেত্রে শূন্যগুহা-মাঝে, কে ও রে পশ্চাতে ডাকে “পিতা পিতা’ বলে ! ছিড়ে ফেল, ভেঙে ফেল চরণের বাধাহেথা হতে চল ছুটে, আর দেরি নয় । VOC)