পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুরোপ-প্রবাসীর পত্ৰ brミ述 ই-র সঙ্গে তার বিয়ের সম্বন্ধ । তাদের দুজনে কোর্টশিপ চলছে। রবিবার দু-বেলা প্ৰেয়সীকে নিয়ে র্তার চার্চে যেতে হয় । যখন বিকেলে একটু অবসর পান, প্ৰণয়িনীর বাড়িতে গিয়ে এক পেয়ালা চা খেয়ে আসেন । প্ৰতি শুক্রবার সন্ধেবেলা তাদের বাড়িতে তার নেমস্তন্ন । এইরকমে তার সময় ভারি অল্প । উভয়ে পরস্পরকে নিয়ে এমন সুখী আছেন যে, অবসরকাল কাটাবার জন্যে অন্য কোনো জীবের সঙ্গ তাদের আবশ্যক করে না । শুক্রবার সন্ধেবেলায় যদি আকাশ ভেঙে পড়ে। তবু মিস্টার ন— পরিষ্কার করে চুলটি ফিরিয়ে, পমেটম মেখে, কোটি ব্রাশ করে ফিটফাট হয়ে, ছাতা হাতে বাড়ি থেকে বেরোবেনই। একবার খুব শীত পড়েছিল, আর তার ভারি কাশি হয়েছিল ; মনে করলেম, আজ বুঝি বেচারির আর যাওয়া হয় না। সাতটা বাজতে না বাজতেই দেখি তিনি ফিটফাট হয়ে নেবে ७८छ् । যা হােক, আমার এই পরিবারের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। সেদিন মেজো মেয়ে আমাকে বলছিলেন যে, প্ৰথম যখন তারা শুনলেন যে একজন ভারতবর্ষীয় ভদ্রলোক তাদের মধ্যে বাস করতে আসছে, তাদের ভারি ভয় হয়েছিল । যেদিন আমার আসবার কথা সেইদিন মেজো ও ছোটো মেয়ে, তাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে গিয়েছিলেন । প্ৰায় এক হগুপ্ত বাড়িতে আসেন নি । তার পর হয়তো যখন তারা শুনলেন যে, মুখে ও সর্বাঙ্গে উল্কি নেই, ঠোঁট বিধিয়ে অলংকার পরে নি, তখন তারা বাড়িতে ফিরে এলেন । ওঁরা বলেন যে প্রথম প্রথম এসে যদিও আমার সঙ্গে কথাবার্তা কয়েছিলেন তবুও দুদিন পর্যন্ত আমার মুখ দেখেন নি। হয়তো ভয় হয়েছিল যে কী অপূর্ব ছাচে ঢালাই মুখই না জানি দেখবেন । তারপর যখন মুখ দেখলেন— তখন ? যা হােক, এই পরিবারে সুখে আছি। সন্ধেবেলা আমোদে কেটে যায়— গান বাজনা, বই পড়া । আর এথেল তার আঙ্কল আর্থারকে মুহূর্ত ছেড়ে থাকতে চায় না ।