পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

UDమ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ললিতা কহিল, “আপনাকে এ বিষয়ে আমাদের সাহায্য করতে হবে।” . বিনয় কহিল, “আমার দ্বারা ষা হতে পারে তার কোনো ত্রুটি হবে না। আমাকে কী করতে হবে বলুন ।” ললিতা কহিল, “আমরা ব্রাহ্ম বলে হিন্দু অভিভাবকেরা আমাদের বিশ্বাস করে না । এ বিষয়ে আপনাকে চেষ্টা দেখতে হবে ।” বিনয় উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিয়া কহিল, “আপনি কিছু ভয় করবেন না— আমি পারব।” আনন্দময়ী কহিলেন, “তা ও খুব পারবে । লোককে কথায় ভূলিয়ে বশ করতে ওর জুড়ি কেউ নেই।” ললিত কহিল, "বিদ্যালয়ের কাজকর্ম যে নিয়মে ধে-রকম করে চালানো উচিত— সময় ভাগ করা, ক্লাস ভাগ করা, বই ঠিক করে দেওয়া, এ-সমস্তই আপনাকে করে দিতে হবে ।” এ কাজটাও বিনয়ের পক্ষে শক্ত নহে, কিন্তু তাহার ধাধা লাগিয়া গেল । বরদাসুন্দরী তাহার মেয়েদের সহিত তাহাকে মিশিতে নিষেধ করিয়া দিয়াছেন এবং সমাজে তাহাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলিতেছে, এ কথাটা কি ললিতা একেবারেই জানে না ? এ স্থলে বিনয় যদি ললিতার অনুরোধ রাখিতে প্রতিশ্রত হয় তবে সেটা অন্যায় এবং ললিতার পক্ষে অনিষ্টকর হইবে কি না এই প্রশ্ন তাছাকে আঘাত করিতে লাগিল । এ দিকে ললিতা যদি কোনো শুভকর্মে তাহার সাহায্য প্রার্থনা করে তবে সমস্ত চেষ্টা দিয়া সেই অনুরোধ পালন না করিবে এমন শক্তি বিনয়ের কোথায় ? এ পক্ষে স্বচরিতা ও আশ্চর্ষ হইয়া গেছে । সে স্বপ্নেও মনে করে নাই ললিতা হঠাৎ এমন করিয়া বিনয়কে মেয়ে-ইস্কুলের জন্য অনুরোধ করিবে । একে তো বিনয়কে লইয়া যথেষ্ট জটিলতার স্বষ্টি হইয়াছে তাহার পরে এ আবার কী কাও ! ললিতা জানিয়া শুনিয়া ইচ্ছাপূর্বক এই ব্যাপারটি ঘটাইয়া তুলিতে উষ্ঠত হইয়াছে দেখিয়া স্নচরিতা ভীত হইয়া উঠিল । ললিতার মনে বিদ্রোহ জাগিয়া উঠিয়াছে তাহা সে বুঝিল, কিন্তু বেচারা বিনয়কে এই উৎপাতের মধ্যে জড়িত করা কি তাহার উচিত হইতেছে ? স্বচরিতা উৎকণ্ঠিত হইয়। বলিল উঠিল, “এ সম্বন্ধে একবার বাবার সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে তো । মেয়ে-ইস্কুলে ইন্সপেক্টারি পদ পেলেন বলে বিনয়বাৰু এখনই যেন খুব বেশি আশান্বিত হয়ে না ওঠেন ।” স্বচরিতা কৌশলে প্রস্তাবটাকে যে বাধা দিল তাহা বিনয় বুঝিতে পারিল, ইহাতে তাহার মনে আরও খটকা বাজিল । বেশ বোঝা যাইতেছে; যে সংকট উপস্থিত