পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86 o রবীন্দ্র-রচনাবলী করিয়া দিবেন। ললিত ষে বিনয়কে ভালোবাসে তাহা তিনি নিশ্চয় বুঝিয়াছিলেন। সেইজন্তই তাহাদের বিবাহ লইয়া সমাজে যখন গোল বাধিয়াছিল, তখন তিনি নিজে ছাড়া আর সকলকেই এজন্য অপরাধী করিয়াছিলেন । ললিতার সঙ্গে কয়দিন তিনি কথাবার্তা এক-রকম বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন । সেইজন্ত আজ যখন একটা কিনারা হইল সেটা যে অনেকটা তাছার জন্যই হইল এই গৌরবটুকু ললিতার কাছে প্রকাশ করিয়া তাহার সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করিতে ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। ললিতার বাপ তো সমস্ত মাটি করিয়াই দিয়াছিলেন। ললিতা নিজেও তো বিনয়কে সিধা করিতে পারে নাই। পামুবাবুর কাছ হইতেও তো কোনে সাহায্য পাওয়া গেল না। একলা বরদাসুন্দরী সমস্ত গ্রন্থি ছেদন করিয়াছেন । হা হা, একজন মেয়েমানুষ যাহা পারে পাচ জন পুরুষে তাহা পারে না । বরদাসুন্দরী বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া শুনিলেন, ললিতা আজ সকাল-সকাল শুইতে গেছে, তাহার শরীর তেমন ভালো নাই। তিনি মনে মনে হাসিয়া কছিলেন, 'শরীর ভালো করিয়া দিতেছি।’ একটা বাতি হাতে করিয়া তাহার অন্ধকার শয়নগৃহে প্রবেশ করিয়| দেখিলেন, ললিতা বিছানায় এখনো শোয় নাই, একটা কেদারায় হেলান দিয়া পড়িয়া আছে। ললিতা তৎক্ষণাৎ উঠিয়া বসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মা, তুমি কোথায় গিয়েছিলে ?” তাহার স্বরের মধ্যে একটা তীব্রতা ছিল । সে খবর পাইয়াছিল তিনি সতীশকে লইয়া বিনয়ের বাসায় গিয়াছিলেন । বরদাসুন্দরী কহিলেন, “আমি বিনয়ের ওখানে গিয়েছিলেম।” "কেন ?” কেন! বরদা মুন্দরীর মনে মনে একটু রাগ হইল। ‘ললিতা মনে করে আমি কেবল শুর শক্রতাই করিতেছি ! অকৃতজ্ঞ !’ বরদাসুন্দরী কহিলেন, “এই দেখো কেন।” বলিয়া বিনয়ের সেই চিঠিখানা ললিতার চোখের সামনে মেলিয়া ধরিলেন। সে চিঠি পড়িয়া ললিতার মুখ লাল হইয়া উঠিল। বরদাসুন্দরী নিজের কৃতিত্ব-প্রচারের জন্য কিছু অত্যুক্তি করিয়াই জানাইলেন যে, এ চিঠি কি বিনয়ের হাত হইতে সহজে বাহির হইতে পারিত। তিনি জাক করিয়া বলিতে পারেন এ কাজ আর-কোনো লোকেরই সাধ্যের মধ্যেই ছিল না । ললিতা দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া তাহার কেদারায় শুইয়া পড়িল। বরদাসুন্দরী মনে করিলেন, তাহার সম্মুখে প্রবল হৃদয়াবেগ প্রকাশ করিতে ললিতা লজ্জা করিতেছে । ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন ।