পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రీఆ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী জন্যে তাকে কিছুই চিস্তা করতে হয় না। সেই আমাদের হৃদয় যখন তার স্বাভাবিক সংশয়রহিত বোধশক্তির দ্বারাই পরম এককে বিশ্বের মধ্যে এবং আপনার মধ্যে প্রত্যক্ষ অনুভব করে তখন মানুষ চিরকালের জন্যে বেঁচে যায়। জোড়া দিয়ে দিয়ে অনন্ত কালেও আমরা এককে পেতে পারি নে, হৃদয়ের সহজ বোধে এক মুহূর্তেই তাকে একান্ত আপন করে পাওয়া যায়। তাই উপনিষৎ বলেছেন তিনি আমাদের হৃদয়ে সন্নিবিষ্ট, তাই একেবারেই রসরূপে আনন্দরূপে তাকে অব্যবহিত করে পাই, আর-কিছুতে পাবার জো নেই— যতো বাচো নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ আনন্দং ব্রহ্মণো বিদ্বান ন বিভেতি কুতশ্চন । বাক্যমন র্যাকে না পেয়ে ফিরে আসে সেই ব্রহ্মের আনন্দকে হৃদয় যখন বোধ করে তখন আর কিছুতেই ভয় থাকে না । এই সহজ বোধটি হচ্ছে প্রকাশ– এ জানা নয়, সংগ্রহ করা নয়, জোড়া দেওয়া নয়, আলো যেমন একেবারে প্রকাশ হয় এ তেমনি প্রকাশ। প্রভাত যখন হয়েছে তখন আলোর খোজে হাটে বাজারে ছুটতে হবে না, জ্ঞানীর দ্বারে ঘা মারতে হবে না— যা-কিছু বাধা আছে সেইগুলো কেবল মোচন করতে হবে— দরজা খুলে দিতে হবে, তা হলেই আলো একেবারে অখণ্ড হয়ে প্রকাশ পাবে। সেই জন্তেই এই প্রার্থনাই মানুষের গভীরতম প্রার্থনা : আবিরাবীর্ম এধি। হে আবিঃ, হে প্রকাশ, তুমি আমার মধ্যে প্রকাশিত হও । মানুষের যা দুঃখ সে অপ্রকাশের দুঃখ– যিনি প্রকাশস্বরূপ তিনি এখনও তার মধ্যে ব্যক্ত হচ্ছেন না ; তার হৃদয়ের উপর অনেকগুলো আবরণ রয়ে গেছে ; এখনও তার মধ্যে বাধা-বিরোধের সীমা নেই ; এখনও সে আপনার প্রকৃতির নানা অংশের মধ্যে পরিপূর্ণ সামঞ্জস্য স্থাপন করতে পারছে না ; এখনও তার এক ভাগ অন্য ভাগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে, তার স্বার্থের সঙ্গে পরমার্থের মিল হচ্ছে না, এই উচ্ছৃঙ্খলতার মধ্যে যিনি আবিঃ তার আবির্ভাব পরিস্ফুট হয়ে উঠছে না ; ভয় দুঃখ শোক অবসাদ অকৃতার্থতা এসে পড়ছে— যা গিয়েছে তার জন্যে বেদন যা আসবে তার জন্য ভাবনা চিত্তকে মথিত করছে, আপনার অন্তর বাহির সমস্তকে নিয়ে জীবন প্রসন্ন হয়ে উঠছে না । এই জন্যেই মানুষের প্রার্থনা : রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ! হে রুত্ৰ, তোমার প্রসন্ন মুখের দ্বারা আমাকে নিয়ত রক্ষা করে । যেখানে সেই আবিঃ’র আবির্ভাব সম্পূর্ণ নয় সেখানে প্রসন্নতা নেই ; যে দেশে সেই আবিঃ’র আবির্ভাব বাধাগ্রস্ত সেই দেশ থেকে প্রসন্নতা চলে গেছে ; যে গৃহে তার আবির্ভাব প্রতিহত সেখানে ধনধান্ত