পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२७ রবীন্দ্র-রচনাবলী করা হয়। সাধারণের বেলাতেও তাই- সাধারণ শ্রোতাও যখন শুনছে তখন সে আর্টিস্টের সঙ্গে সঙ্গে বহু হচ্ছে। বহুলতাকে নয়, বন্ধু হবার প্রবৃত্তিকে খাতির না করলে আর্টকে ঘূণা করা হয়। বহুলতার মূলে আছে 'বহুর্ভবামিত্র তাগিদ। বিশেষত আমাদের আলাপে। আমাদের আলাপ অবিরাম গতিশীল, তার প্রকৃতিই হল procession। অতএব, ঠিক তার revelation হয় না, হয় १. श्3शी फ्राँशै revealing! . . . ax এখন ছায়ানটের আলাপ চলুক। প্রথমেই সারে, গ’ম’প’ পরে’ গম রে’ সা” নেওয়া হল, তার পর আরোহীতে সারে” রে’গ’ গামা’ মা’প’ নিয়ে ধৈবত আন্দোলিত করে গলা ওপরের সুরে পৌছল, অবরোহীতে ঐপ্রকার শুদ্ধস্বরগুলি ব্যবহার করে পারে” গামা’ পা’ এই মীড়টি নিয়ে রিখাবে গলা থামল- কোনো স্বরই বিবাদী হল না। তবুও কি ছায়ানট রাগিণী গাওয়া হল? আমার মতে এখনো হল না, হল কেবল ছায়ানটের blue printটুকু, ডিজাইনটুকু। শ্রমবিভাগেরণ ফলে স্থপতিবিদ্যায় ডিজাইনের কদর বেড়েছে জানি, কিন্তু নীল রঙের কাগজে সাদা আঁচড় দেখে বসবাসের সুখভোগ কি স্বাভাবিক ? আপনি বলবেন কল্পনার উদ্রেক করানোই আটিস্টের কর্তব্য। কিন্তু, কল্পনাও নানা জাতের, ডিজাইনারও নানা রকমের। সেইজন্য নীচের ও ওপরের তলার, স্নানের ঘরের, মায় সিঁড়িরও cross-section চাই, এলিভেশনের লোভ দেখিয়ে ছেড়ে দিলে চলবে না। তার ওপর চাই নির্মাণ, চাই গৃহপ্ৰবেশ, চাই বসবাস- এ ঘরে বাসর, ও ঘরে মৃত্যু, এ জানিলা দিয়ে লবঙ্গলতিকার উগ্রগন্ধ পাওয়া, ওটা দিয়ে নারকেল গাছের সোনালিফুল থেকে গাঢ় সবুজ ডাবের পরিণতি দেখা, এ দেয়ালে সিঁদুরের দাগ, ওটায় খুকীর আঁচড়, এ পর্দা মেজদির, ওটা সেজ বৌমার তৈরি- সব চাই, তবেই না গৃহ! উপমা ছেড়ে দিই-শ্ৰীকৃষ্ণকে ভগবদগীতা শোনাতে চাই না। ছায়ানটের প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর (প্রতিষ্ঠা কথাটি ঠিক নয়, কারণ আলাপের প্রাণই হল গতি) বিস্তারের দ্বারা তাকে মুক্তি দিতে হবে। . আলাপবিস্তার অনেকটা ভারতসাম্রাজ্যের non-regulated area'র মতন। তার রীতিনীতিসুনির্দিষ্ট পন্থাও আছে, তবে সেটি বন্দেশী রাগিণীর রূপ-প্রকাশের নয়। হয়তে আপনি ছাড়া আর কেউ সেই নিয়মকে ভাষায় ব্যক্ত করতে পারে না। তবে পন্থা আছে জানি, কারণ, শুনেছি। প্রথমে ধীরে, গমক ও মীড়ের সাহায্যে তান না দিয়ে তার পর মধ্যলয়ে খুব ছোটাে তানের সঙ্গে মীড় মিশিয়ে, তার পর- সব রাগে নয়- গোটা কয়েক রাগে দ্রুত ও বিচিত্র কর্তব্যের দ্বারা আলাপ করা হয়। সাধারণত আলাপে খেয়াল ঠুংরী ও টপ্লার তান ব্যবহৃত হয় না। অন্য অলংকার, যেমন ছুন্টু মূৰ্ছনা প্রভৃতিরও প্রয়োগ চলে। তার পর বাণী আছে। সেই বাণীর অবলম্বনেই বোল-তান দেওয়া হয়। এই হল আলাপের পন্থা, যার প্রধান কথা- পরম্পরা। মীড়ের পরই জমিন তৈরি হাতে-নো-হতেই তানকর্তব্য চলে না। সবই আসতে পারে, আসবেও, তবে যথাসময়ে। এইখানেই নির্বাচনক্রিয়া। বড়ো আলাপিয়ার পদ্ধতি সুসংগত, তার নির্বাচন যথেচ্ছাচারিতা নয়। ভালো। ঘরানায় পথটি পাকা। যদি কোনো ওস্তাদ প্ৰতিভার জোরে আরো ভালো রাস্তা তৈরি করে তা হলে তাকে ও তার পথকে কদর করবই করব। আলাপে এই প্লকার প্রতিভার সাক্ষাৎলাভ দুর্লভ, আলােবন্দে খাঁর ঘরানা ভিন্ন। তবে অন্য গানে আবুল করিমকে আমি খুব উচ্চস্থান দিই। আপনি বোধ হয় শুনেছেন যে, আবুল করিম ফৈয়াজের মতন ঠিক ঘরানা গাইয়ে নয়। সে অনেক সময় বন্দেশ ভুলে যায়-কিংবা দু-একটি লাইন গায়, বড়ো ওস্তাদে তাকে সেজন্য ঠাট্টাও করে, হিন্দোলে শুদ্ধ মধ্যম দেয়, ভৈরবীতে শুদ্ধ পর্দা লাগায়, গায় নিজের মেজাজে। কিন্তু সে মেজাজে । কী মজা। এমদাদ হােসেন কি ঘরানা বাজিয়ে ছিলেন? কিন্তু এত রসিক সেতারী, জন্মায় নি।