পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

g○・ রবীন্দ্র-রচনাবলী অন্ধকারে চলিয়া গেল। আমার গায়ে তার হাওয়া দিতে সমস্ত গায়ে কাটা দিয়া छेठिल । ! * * মনে করিলাম, বাহিরে গিয়া শুইব । কোন দিকে যে গুহার দ্বার তা ভুলিয়া গেছি। গুড়ি মারিয়া এক দিকে চলিতে চেষ্টা করিয়া মাথা ঠেকিয়া গেল, আর-এক দিকে মাথা ঠুকিলাম, আর-এক দিকে একটা ছোটাে গর্তের মধ্যে পড়িলাম— সেখানে গুহার ফাটল-র্চোয়ানো জল জমিয়া আছে। শেষে ফিরিয়া আসিয়া কম্বলটার উপর শুইলাম। মনে হইল সেই আদিম জন্তুটা আমাকে তার লালাসিক্ত কবলের মধ্যে পুরিয়াছে, আমার কোনো দিকে আর বাহির হইবার পথ নাই। এ কেবল একটা কালো ক্ষুধা, এ আমাকে অল্প অল্প করিয়া লেহন করিতে থাকিবে এবং ক্ষয় করিয়া ফেলিবে । ইহার রস জারক রস, তাহ নিঃশব্দে জীর্ণ করে । ঘুমাইতে পারিলে বাচি ; আমার জাগ্ৰংচৈতন্য এত বড়ে সর্বনাশা অন্ধকারের নিবিড় আলিঙ্গন সহিতে পারে না, এ কেবল মৃত্যুরই সহে । জানি না কতক্ষণ পরে— সেটা বোধ করি ঠিক ঘুম নয়— অসাড়তার একটা পাংলা চাদর আমার চেতনার উপরে ঢাকা পড়িল ৷ এক সময়ে সেই তন্দ্রবেশের ঘোরে আমার পায়ের কাছে প্রথমে একটা ঘন নিশ্বাস অনুভব করিলাম। ভয়ে আমার শরীর হিম হইয়া গেল। সেই আদিম জন্তুটা ! তার পরে কিসে আমার প৷ জড়াইয়া ধরিল । প্রথমে ভাবিলাম কোনো একটা বুনো জন্তু । কিন্তু তাদের গায়ে তো রোয়া আছে– এর রেয়া নাই। আমার সমস্ত শরীর যেন কুঞ্চিত হইয়া উঠিল । মনে হইল একটা সাপের মতে জন্তু, তাহাকে চিনি না। তার কী রকম মুগু, কী রকম গ, কী রকম লেজ কিছুই জানা নাই— তার গ্রাস করিবার প্রণালীট কী ভাবিয়া পাইলাম না । সে এমন নরম বলিয়াই এমন বীভৎস, সেই ক্ষুধার পুঞ্জ । ভয়ে ঘৃণায় আমার কণ্ঠ রোধ হইয়া গেল। আমি দুই পা দিয়া তাহাকে ঠেলিতে লাগিলাম। মনে হইল সে আমার পায়ের উপর মুখ রাখিয়াছে—ঘন ঘন নিশ্বাস পড়িতেছে— সে যে কী রকম মুখ জানি না। আমি পা ছুড়িয়া ছড়িয়া লাথি মারিলাম । অবশেষে আমার ঘোরটা ভাঙিয়া গেল। প্রথমে ভাবিয়াছিলাম তার গায়ে রোয় নাই, কিন্তু হঠাৎ অনুভব করিলাম, আমার পায়ের উপর একরাশি কেশর আসিয়া পড়িয়াছে । ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া বসিলাম । অন্ধকারে কে চলিয়া গেল। একটা কী যেন শব্দ শুনিলাম। সে কি চাপা কান্না ?