পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छछूब्रज 8ግ¢ নবীন আমাদের গুরুজির একজন চেলার আত্মীয়— আমাদের প্রতিবেশী, সে আমাদের কীর্তনের দলের একজন গায়ক। গিয়া দেখিলাম, তার স্ত্রী তখন মরিয়া গেছে। খবর লইয়া জানিলাম, নবীনের স্ত্রী তার মাতৃহীন বোনকে নিজের কাছে আনিয়া রাখিয়াছিল। ইহারা কুলীন, উপযুক্ত পাত্র পাওয়া দায়। মেয়েটিকে দেখিতে ভালো। নবীনের ছোটাে ভাই তাকে বিবাহ করিবে বলিয়া পছন্দ করিয়াছে। সে কলিকাতায় কলেজে পড়ে, আর কয়েক মাস পরে পরীক্ষা দিয়া আগামী আষাঢ় মাসে সে বিবাহ করিবে এই রকম কথা। এমন সময়ে নবীনের স্ত্রীর কাছে ধরা পড়িল যে তার স্বামীর ও তার বোনের পরস্পর আসক্তি জন্মিয়াছে । তখন তার বোনকে বিবাহ করিবার জন্য সে স্বামীকে অনুরোধ করিল । খুব বেশি পীড়াপীড়ি করিতে হইল না। বিবাহ চুকিয় গেলে পর নবীনের প্রথম স্ত্রী বিষ খাইয়া আত্মহত্যা করিয়াছে। তখন আর কিছু করিবার ছিল না। আমরা ফিরিয়া আসিলাম। গুরুজির কাছে অনেক শিষ্য জুটিল, তারা তাকে কীর্তন শুনাইতে লাগিল— তিনি কীর্তনে যোগ দিয়া নাচিতে লাগিলেন । প্রথম রাত্রে তখন চাদ উঠিয়াছে। ছাদের যে কোণটার দিকে একটা চালত গাছ ঝুকিয়া পড়িয়াছে সেইখানটার ছায়া-আলোর সংগমে দামিনী চুপ করিয়া বসিয়া ছিল। শচীশ তার পিছন দিকের ঢাকা বারান্দার উপরে আস্তে আস্তে পায়চারি করিতেছে । আমার ডায়ারি লেখা রোগ, ঘরের মধ্যে একলা বসিয়া লিখিতেছি । সেদিন কোকিলের আর ঘুম ছিল না। দক্ষিনে হাওয়ায় গাছের পাতাগুলো যেন কথা বলিয়া উঠিতে চায়, আর তার উপরে চাদের আলো ঝিলমিল করিয় উঠে । হঠাৎ এক সময়ে শচীশের কী মনে হইল, সে দামিনীর পিছনে আসিয়া দাড়াইল । দামিনী চমকিয়া মাথায় কাপড় দিয়া একেবারে উঠিয়া দাড়াইয়া চলিয়া যাইবার উপক্রম করিল। শচীশ ডাকিল, দামিনী ! দামিনী থমকিয়া দাড়াইল। জোড়হাত করিয়া কহিল, প্রভু, আমার একটা কথা শোনে । শচীশ চুপ করিয়া তার মুখের দিকে চাহিল। দামিনী কহিল, আমাকে বুঝাইয়। দাও তোমরা দিনরাত যা লইয়া আছ তাহাতে পৃথিবীর কী প্রয়োজন ? তোমরা কাকে বাচাইতে পারিলে ? আমি ঘর হইতে বাহির হইয় বারান্দায় আসিয়া দাড়াইলাম। দামিনী কহিল, তোমরা দিনরাত রস রস করিতেছ, ও ছাড়া আর কথা নাই। রস যে কী সে তো