পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রবাহের মধ্যে যেমন বুদ্ধিহীন হৃদয়হীনের মতো দাড়াইয়া ছিল, আজও তেমনি দাড়াইয়া আছে। রঘুপতি চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলেন, মিথ্যা কথা! সমস্ত মিথ্যা! হা বৎস জয়সিংহ, তোমার অমূল্য হৃদয়ের যুক্ত কাহাকে দিলে! এখানে কোনো দেবতা নাই, কোনে। দেবতা নাই! পিশাচ রঘুপতি সে রক্ত পান করিয়াছে!” বলিয়া কালীর প্রতিমা রপতি আসন হইতে টানিয়া তুলিয়া লইলেন। মন্দিরের দ্বারে দাড়াইয়া সবলে। রে নিক্ষেপ করিলেন। অন্ধকারে পাবাণসোপানের উপর দিয়া পাষাণ প্রতিমাশব্দ করিয়া গড়াইতে গড়াইতে গোমতীর জলের মধ্যে পড়িয়া গেল। অজ্ঞানরাক্ষসী পাষাণ-আকৃতি ধারণ করিয়া এতদিন রক্তপান করিতেছিল, সে আজ গোমতীগর্ভের সহস্র পাষাণের মধ্যে অদৃশ্য হইল, কিন্তু মানবের কঠিন হৃদয়াসন কিছুতেই পরিত্যাগ করিল না। রঘুপতি দীপ নিবাইয়া দিয়া পথে বাহির হইয়া পড়িলেন, সেই রাত্রেই রাজধানী ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন।

একচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ

নোয়াখালির নিজামপুরে বিম্বন ঠাকুর কিছুদিন হইতে বাস করিতে ছেন। সেখানে ভয়ংকর মড়কের প্রাদুর্ভাব হইয়াছে।

ফাস্তুন মাসের শেষাশেষি একদিন সমস্ত দিন মেঘ করিয়া থাকে, মাঝে মাঝে অল্প অল্প বৃষ্টিও হয়। অবশেষে সন্ধ্যার সময় রীতিমত খাড় আরম্ভ হয়। প্রথমে পূর্বদিক হইতে বায়ু বহিতে থাকে। রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরের সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব হইতে প্রবল বেগে ঝড় বহিতে লাগিল। অবশেষে মুষলধারে বৃষ্টি আরক্ত হইয়া ঝড়ের বেগ কমিয়া গেল। এমন সময়ে রব উঠিল বা আসিতেছে’। কেহ ঘরের চালে॥ উঠিল, কেহ পুষ্করিণীর পাড়ের উপর গিয়া দাড়াইল, কেহ বৃক্ষশাখায় কেহ মন্দিরের চূড়ায় আশ্রয় লইল। অন্ধকার রাত্রি, অবিশ্রাম বৃষ্টি