পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
রাজসিংহ।

 যাহারা উহার পশ্চাদ্ধাবিত হইয়াছিল তাহারা বলিল; “মহারাজ সে ব্যক্তি পলাইয়াছে।”

 রাণা। শীঘ্র তাহার সন্ধান করিয়া লইয়া আইস।

 ভৃত্যগণ তখন সবিশেষ কথা বুঝাইয়া নিবেদন করিল, যে আমরা অনেক সন্ধান করিয়াছি, কিন্তু পাই নাই।

 অশ্বারোহিগণ মধ্যে রাণার পুত্ত্রদ্বয়, তাঁহার জ্ঞাতি ও অমাত্যবর্গপ্রভৃতি ছিল। রাজা পুত্ত্রদ্বয় ও অমাত্যবর্গকে নির্জ্জনে লইয়া গিয়া কথাবার্ত্তা বলিলেন। পরে ফিরিয়া আসিয়া আর সকলকে বলিলেন,

 “প্রিয়জনবর্ণ! আজি অধিক বেলা হইয়াছে; তোমাদিগের সকলের ক্ষুধাতৃষ্ণা পাইয়াছে সন্দেহ নাই। কিন্তু আজ উদয়পুরে গিয়া ক্ষুধাতৃষ্ণা নিবারণ করা, আমাদিগের অদৃষ্টে নাই। এই পার্ব্বত্য পথে আবার আমাদিগকে ফিরিয়া যাইতে হইবে। একটি ক্ষুদ্র লড়াই জুটিয়াছে—লড়াইয়ে যাহার সাধ থাকে আমার সঙ্গে আইস—আমি এই পর্ব্বত পুনরারোহণ করিব। যাহার সাধ না থাকে উদয়পুরে ফিরিয়া যাও।”

 এই বলিয়া রাণা পর্ব্বত আরোহণে প্রবৃত্ত হইলেন; অমনি “জয় মহারাণা কি জয়! জয় মাতা জী কি জয়!” বলিয়া সেই শত অশ্বারোহী তাঁহার পশ্চাতে পর্ব্বত আরোহণে প্রবৃত্ত হইল। উপরে উঠিয়া হর! হর! হর! শব্দে, রূপনগরের পথে ধাবিত হইল। অশ্বক্ষুরের আঘাতে অধিত্যকায় ঘোরতর প্রতিধ্বনি হইতে লাগিল।