পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
৮৭

সহাধ্যায়ীর সহিত সম্মিলিত হইলেন, তন্মধ্যে রামগোপাল ঘোষ পরে স্ববিখ্যাত হইয়াছিলেন। রসিককৃষ্ণ মল্লিক, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি তাহার পরবর্তী সময়ের যৌবনমুহৃদগণ তখন কেহ প্রথম শ্রেণীতে, কেহ দ্বিতীয় শ্রেণীতে, কেহ বা তৃতীয় শ্রেণীতে পাঠ করিতেছিলেন। হেনরী ভিভিয়ান ডিরোজিও (Henry Wivian Derozio) নামে একজন ফিরিঙ্গী যুবক, তখন ঐ শ্রেণীর শিক্ষক ছিলেন। বঙ্গের নবযুগ-প্রবর্তক এই অসাধারণ প্রতিভাশালী শিক্ষকের কিছু বিবরণ এখানেই দেওয়া আবশুক।

হেনরী ভিভিয়ান ডিরোজিও।

 ডিরোজিও ১৮০৯ খ্ৰীষ্টাব্দে কলিকাতা ইটালী পদ্মপুকুরের সন্নিহিত মামলালীর দরগা নামক এক ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। ইনি জাতিতে পোর্ভ গীজ বংশোৎপন্ন ফিরিঙ্গী। ইহার পিতা জে স্কট কোম্পানির সওদাগরী অফিসে একটা বড় কৰ্ম্ম করিতেন। ইহার আর দুই ভ্রাতা ও দুই ভগিনী ছিলেন। ডিরোজিওর পিতা স্বচ্ছল অবস্থাতে ফিরিঙ্গীসমাজে সন্ত্রমের সহিত বাস করিতেন। কিন্তু সে সময়ে ফিরিঙ্গসমাজের বালকগণ সংশিক্ষার অভাবে প্রায় বিপ্লত হইয়া উঠিত। ডিরোজিওর জ্যেষ্ঠ সহোদর ফ্রাঙ্ক কুসঙ্গে পড়িয়া বিপথে পদার্পণ করে; এবং সকল কৰ্ম্মের বাহির হইয়া যায়। দ্বিতীয় ক্লডিয়ুসকে পিতা শিক্ষার্থ স্কটুলণ্ডে প্রেরণ করিয়াছিলেন। তাহার পরের সংবাদ জানি না। প্রথম ভগিনী সোফিয়। ১৭ বৎসর বয়সে গতাস্ক হন। সৰ্ব্বকনিষ্ঠা এমিলিয়া ডিরোজিওর প্রতি বিশেষ অমুরক্তা ও সকল বিষয়ে তাহার উৎসাহদায়িনী ছিলেন।

 সে সময়ে ডেবিড ড্রমও নামে একজন স্কটুলগু দেশীয় লোক কলিকাতার ধৰ্ম্মতলাতে একটা স্কুল খুলিয়াছিলেন। এই ড্রমও সে সময়ের একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। তাহার রচিত কবিতা সকল সে সময়ে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিল। তদ্ভিন্ন তিনি ইংরাজী সাহিত্য এবং দর্শনশাস্ত্রেও স্থপণ্ডিত ছিলেন। এরূপ শুনা যায় যে ধৰ্ম্মবিষয়ে আত্মীয় স্বজনের সহিত মতভেদ উপস্থিত হওয়াতে তিনি চিরদিনের মত জন্মভূমি পরিত্যাগ করিয়া এদেশে আসিয়াছিলেন। , যে স্বাধীন চিন্তার প্রভাবে ফরাসি বিপ্লবের অভু্যদয়, সেই স্বাধীন চিন্তা পূর্ণমাত্রায় তাহার , অন্তরে কার্য্য করিতেছিল। ড্রমও বিদ্যালয়ের দ্বার উদঘাটন করিলে কলিকাতাবাসী ইংরাজগণ , বলিতে লাগিলেন, সেখানে পড়িলে বালকগণ নাস্তিকতাতে বৰ্দ্ধিত হইবে। এই ভয়ে অনেকে শ্বীয় স্বীয় বালককে তাহার বিদ্যালয়ে প্রেরণ করিতেন না।