পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
tরামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

তাঁহার প্রাণে কিরূপ বাজিল। উত্তরকালে হেয়ারের নাম করিলেই তাঁহার চক্ষু অশ্রুতে সিক্ত হইত। শরীরে যত দিন চলিবার শক্তি ছিল, মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্ব্বকাল পর্য্যস্ত, প্রতি বৎসর ১লা জুন হেয়ারের সমাধিক্ষেত্রের নিকটে গিয়া বন্ধুবান্ধবকে ডাকিয়া তাঁহার স্মরণার্থ সভা করিয়াছেন। উপকারীর প্রতি কৃত-জ্ঞতা ও সাধু-ভক্তি লাহিড়ী মহাশয়ের চরিত্রের দুইটা প্রধান গুণ ছিল।

 কেবল যে রামতনু লাহিড়ী হেয়ারের শোকে শোকার্ত্ত হইলেন তাহা নহে, রামগোপাল প্রমুখ যৌবন-সুহৃদগণ ও সকলে সেই শোকে অধীর হইয়া পড়িলেন। সে সময়ে রামগোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র, তারাচাঁদ চক্রবর্ত্তী প্রভৃতি বেঙ্গল স্পেক্‌টেটরের সম্পাদন কার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন। তাহাতে তাঁহার হেয়ারের জন্য শোক প্রকাশ করিয়া তাঁহার স্মৃতিচিহ্ন স্থাপনের প্রস্তাব করিলেন। তদনুসারে কাশিমবাজারের রাজা কৃষ্ণনাথ রায় এক সভা আহ্বান করিলেন। ১৭ই জুন মেডিকেল কলেজে ঐ সভার অধিবেশন হইল। তাহাতে হেয়ারের স্মৃতিচিহ্ন স্থাপনে জন্য এক কমিটী নিযুক্ত হইল। রামগোপাল ঘোষ ঐ কমিটীতে ছিলেন। এই কমিটীর চেষ্টাতে হেয়ারের এক সুন্দর, শ্বেত-প্রস্তর-নির্ম্মিত প্রতিমূর্ত্তি গঠিত হইল। তাহাই এক্ষণে প্রেসিডেন্সি কালেজ ও হেয়ার স্কুলের প্রাঙ্গণকে সুশোভিত করিতেছে।

 ১৮৪২ সালের শেষভাগে দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংলণ্ড হইতে ফিরিয়া আসিলেন। তিনি ফিরিয়া আসিবার সময় স্বপ্রসিদ্ধ জর্জ্জ টমসনকে সঙ্গে করিয়া আসিলেন। ইঁহার মত বাগ্মী ও তেজস্বী লোক অল্পই এদেশে আসিয়াছেন। ইংলণ্ড ও আমেরিকাতে ক্রীতদাস প্রথার বিরুদ্ধে তিনি অগ্নিময় বক্তৃতা করিয়া আপনাকে যশস্বী করিয়াছিলেন। আমেরিকা হইতে ইংলণ্ডে ফিরিয়া আসিয়া তিনি মিষ্টর উইলিয়াম এডামের প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া সোসাইটীর সহিত যোগ দেন। সেই সূত্রে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সহিত তাঁহার পরিচয় হয়। দ্বারকানাথ বাবু নিজ সহৃদয়তা ও দেশহিতৈষিতা গুণে, এদেশের লোকদিগকে উদ্বুদ্ধ করিবার মানসে, তাঁহাকে এখানে আনয়ন করেন।

 জর্জ্জ টমসন এদেশে পদার্পণ করিবামাত্র নব্যবঙ্গের নেতৃবৃন্দ একেবারে আনন্দে উৎফুল্প হইয়া উঠিলেন। যেমন চুম্বুকে লোহা লাগিয়া যায়, তেমনি রামগোপাল ঘোষ, তারাচাঁদ চক্রবর্ত্তী, প্যারীচাঁদ মিত্র, প্রভৃতি জর্জ্জ টমসনের