অৰ্দ্ধাশনে থাকিতেন, তিনি এক সময় নিজ তেজে সমগ্র বঙ্গসমাজকে কিরূপ কাঁপাইয়া গিয়াছেন তাহা স্মরণ করিলে মন বিস্মিত ও স্তব্ধ হয়। তিনি এক সময়ে আমাকে বলিয়াছিলেন—“ভারতবর্ষে এমন রাজা নাই যাহার নাকে এই চটিজুতাশুদ্ধ পায়ে টক্ করিয়া লাথি না মারিতে পারি।” আমি তখন অনুভব করিয়াছিলাম, এবং এখনও অনুভব করিতেছি যে তিনি যাহা বলিয়াছিলেন তাহা সত্য। তাঁহার চরিত্রের তেজ এমনি ছিল যে, তাঁহার নিকট ক্ষমতাশালী রাজারাও নগণ্য ব্যক্তির মধ্যে। সেই চরিত্রবীর পুরুষের সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত দিয়া এই পরিচ্ছেদ আরম্ভ করিতেছি, কারণ একদিকে লাহিড়ী মহাশয়ের সহিত অকপট মিত্রতা সূত্রে তিনি বদ্ধ ছিলেন, অপর দিকে বঙ্গদেশের আভ্যন্তরীণ ইতিবৃত্ত গঠন বিষয়ে তিনি এই যুগের সর্বপ্রধান পুরুষ ছিলেন।
বিদ্যাসাগর মহাশয় ১৮২০ সালে, মেদিনীপুর জেলার অন্তঃপাতী বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যে ব্রাহ্মণকুলে তিনি জন্মিলেন, তাঁহারা গুণগৌরবে ও তেজস্বিতার জন্য সে প্রদেশে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁহার পিতামহ রামজয় তর্ক্কভূষণ কোনও পারিবারিক বিবাদে উত্যক্ত হইয়া স্বীয় পত্নী দুর্গাদেবীকে পরিত্যাগ পূর্ব্বক কিছুকালের জন্য দেশান্তরী হইয়া গিয়াছিলেন। দুর্গাদেবী নিরাশ্রয় হইয়া বীরসিংহ গ্রামে স্বীয় পিতা উমাপতি তর্ক্কসিদ্ধান্ত মহাশয়ের ভবনে আশ্রয় গ্রহণ করেন। জ্যেষ্ঠপুত্র ঠাকুরদাস সেই সময় হইতে ঘোর দারিদ্র্যে বাস করিয়া জীবন-সংগ্রাম আরম্ভ করেন। তাঁহার বয়ঃক্রম যখন ১৫ বৎসর হইবে তখন জননীর দুঃখনিবারণার্থ অর্থোপার্জ্জনের উদ্দেশে কলিকাতাতে আগমন করেন। এই অবস্থাতে তাঁহাকে দারিদ্র্যের সহিত যে ঘোর সংগ্রাম করিতে হইয়াছিল, তাঁহার হৃদয়বিদারক বিবরণ এখানে দেওয়া নিম্প্রয়োজন। এই বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে অনেক দিনের পর, অনেক ক্লেশ ভূগিয়া, অবশেষে একটা ৮ টাকা বেতনের কর্ম্ম পাইয়াছিলেন। এই অবস্থাতে গোঘাটনিবাসী রামকান্ত তর্ক্কবাগীশের দ্বিতীয়া কন্যা ভগবর্তী দেবীর সহিত ঠাকুরদাসের বিবাহ হয়, ঈশ্বরচন্দ্র ইহাদের প্রথম সন্তান।
বিদ্যাসাগর মহাশয় শৈশবে কিয়ৎকাল গ্রাম্যপাঠশালাতে পড়িয়া পিতার সহিত কলিকাতাতে আসেন। কলিকাতাতে আসিয়া তাঁহার পিতার মনিব