পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৮
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

উত্তেজনার মধ্যে বঙ্গদেশের ও সমাজের এক মহোপকার সাধিত হইল; এক নবশক্তির সূচনা হইল; এক নব আকাঙ্ক্ষা জাতীয় জীবনে জাগিল। সে জন্যই ইহার কিঞ্চিৎ বিস্তৃত বিবরণ দিলাম।

 বিদ্রোহজনিত উত্তেজনাকালে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ নামক সাপ্তাহিক ইংরাজী কাগজ এক মহোপকার সাধন করিল। পেট্রিয়ট সারগর্ভ সুযুক্তি-পূর্ণ তেজস্বিনী ভাষাতে কর্তৃপক্ষের মনে এই সংস্কার দৃঢ়রূপে মুদ্রিত করিবার প্রয়াস পাইলেন যে, সিপাহী-বিদ্রোহ কেবল কুসংস্কারাপন্ন সিপাহিগণের কার্য্য মাত্র, দেশের প্রজাবর্গের তাহার সহিত যোগ নাই। প্রজাকুল ইংরাজ গবর্ণমেণ্টের প্রতি কৃতজ্ঞ ও অনুরক্ত, এবং তাঁহাদের রাজভক্তি অবিচলিত রহিয়াছে। পেট্রিয়টের চেষ্টাতে লর্ড ক্যানিংএর মনেও এই বিশ্বাস দৃঢ় ছিল; সেজন্য এদেশীয়দিগের প্রতি কঠিন শাসন বিস্তার করিবার জন্য ইংরাজগণ যে কিছু পরামর্শ দিতে লাগিলেন, ক্যানিং তাহার প্রতি কর্ণপাত করিলেন না। পূর্ব্বেই বলিয়াছি সেই কারণে তাঁহার স্বদেশীয়গণ তাঁহার Clemency Canning বা 'দয়াময়ী ক্যানিং” নাম দিল। এমন কি তাহাকে দেশে ফিরাইয়া লইবার জন্য ইংলণ্ডের প্রভূদিগকে অনেকে পরামর্শ দিতে লাগিলেন। পার্লেমেণ্টেও সে কথা উঠিয়াছিল; কিন্তু ক্যানিংএর বন্ধুগণ পেট্রিয়টের উক্তি সকল উদ্ধৃত করিয়া দেখাইলেন যে এদেশবাসিগণ ক্যানিংএর প্রতি কিরূপ অনুরক্ত, এবং ব্রিটিশ গবর্ণমেণ্টের প্রতি কিরূপ কৃতজ্ঞ। পেট্রিয়ট এই সময়ে এদেশীয়দিগের অদ্বিতীয় মুখপাত্র হইয়া উঠিল। হরিশ্চন্দ্র একদিকে যেমন গবর্ণমেণ্টের সর্ব্বপ্রকার বৈধ শাসনকে সমর্থন করিতেন, তেমনি অপরদিকে ইংরাজগণের সর্বপ্রকার অবৈধ আচরণের প্রতিবাদ করিতেন। সকলে উত্তেজনাতে পড়িয়া স্থিরবুদ্ধি হারাইয়াছিল, কেবল পেট্রিয়ট হারায় নাই; এজন্য রাজপুরুষগণের নিকট ইহার আদর বাড়িয়া গেল। এরূপ শুনিয়াছি পেট্রিয়ট বাহির হইবার দিন লর্ড ক্যানিংএয় ভৃত্য আসিয়া পেট্রিয়ট আফিসে বসিয়া থাকিত, প্রথম কয়েকখানি কাগজ মুদ্রিত হইলেই লইয়া যাইত। হিন্দু পেটিয়টের এই প্রভাব দেখিয়া দেশের শিক্ষিত ব্যক্তিগণ পুলকিত হইয়া উঠিলেন। ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান এসোসিএশনের প্রধান প্রধান ব্যক্তিগণ এবং রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী প্রভৃতি নব্যবঙ্গের নেতৃগণ হরিশের পৃষ্ঠপোষক হইয়া তাহাকে উৎসাহ দিতে লাগিলেন।