পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২১৯
হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়।

 হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের জীবনচরিত বঙ্গসমাজের ইতিবৃত্তে চিরস্মরণীয়। একজন দরিদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান নিরবচ্ছিন্ন আত্ম চেষ্টা ও যত্বের দ্বারা কতদূর উন্নতি করিতে পারে, হরিশ তাহার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি ১৮২৪ সালে, কলিকাতার দক্ষিণ উপনগরবর্ত্তী ভবানীপুর নামক স্থানে, স্বীয় মাতামহের ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতা রামধন মুখোপাধ্যায় রাঢ়ীয় কুলীনদেগের মধ্যে কুলমর্য্যাদাতে অগ্রগণ্য ছিলেন। কুলপ্রথা অনুসারে তিনি তিনটী বিবাহ করিয়াছিলেন। তন্মধ্যে হরিশ সর্ব্বকনিষ্ঠ পত্নী রক্মিণী দেবীর গর্ভজাত। হরিশের জ্যেষ্ঠ এক সহোদর ছিলেন তাঁহার নাম হারাণ চন্দ্র। শৈশবাবধি হরিশ ঘোর দ্বারিদ্র্যে বাস করিতে অভ্যস্ত হন। কিছুকাল কোনও পাঠশালে পড়িবার পর তিনি অবৈতনিক ছাত্ররূপে ইউনিয়ান স্কুল নামক একটা স্কুলে প্রেরিত হন। এখানে ছয় বৎসর পাঠ করিয়া ১৪ কি ১৫ বৎসরের সময় দারিদ্রোর তাড়নায় পাঠ সাঙ্গ করেন। সেই বয়সেই উহাকে অর্থোপার্জ্জনের চেষ্টাতে বিব্রত হইতে হয়। কর্ম্ম কি সহজে জোটে? বালক হরিশ উমেদারী করিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া ক্লান্ত হইয়া পড়িলেন। অবশেষে দশ টাকা বেতনের একটী সামান্য চাকুরী জুটল। কিছুদিন তাহা করিয়া বেতনবৃদ্ধির আশা না দেখিয়া তাহা পরিত্যাগ করিলেন। তৎপরে আরও কিছুকাল দারিদ্র্যদুঃখ ভোগ করার পর, মিলিটারি অডিটার জেনেরালের আফিসে ২৫ টাকা মাসিক বেতনের এক কর্ম্ম পাইলেন। এই কর্ম্মটী তাহার সর্ববিধ উন্নতির মূল কারণ হইল। তিনি অন্নবস্ত্রের চিন্তা হইতে একটু নিষ্কৃতি পাইয়াই আগ্রহ ও উৎসাকের সহিত আপনার জ্ঞানোন্নতি সাধনে নিযুক্ত হইলেন। কিনিয়া ও ভিক্ষা করিয়া গ্রন্থ সংগ্রহ পূর্ব্বক পাঠ করিতে আরম্ভ করিলেন। তাহাতে সন্তুষ্ট থাকিতে না পারিয়া কিঞ্চিং বেতন বৃদ্ধি হইলেই কলিকাতা পাবলিক লাইব্রেরীর চাঁদাদায়ী সভ্য হইয়া, সেখানে গিয়া পাঠ করিতে আরম্ভ করিলেন। প্রতিদিন আফিসের ছুটীর পর লাইব্রেরিতে গিয়া বসিতেন ও সন্ধাপর্য্যন্ত ইংরাজী সংবাদপত্র ও পত্রিকাদি পাঠ করিতেন; তদ্ভিন্ন রাশি রাশি গ্রন্থ বাড়ীতে আনিয়া রাত্রে পাঠ করিতেন। এই