পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২২৯

 অগ্রে যে কবিদ্বয়ের কথা বলা গেল তাঁহাদের সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত উল্লেখ করা যাইতেছে।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।

 সুখের বিষয়ে এত দিনের পর ইঁহার সমস্ত গ্রন্থাবলী মুদ্রিত হইতে আরস্তু হইয়াছে এবং ইহার বিশ্বাসযোগ্য জীবনচরিত পাওয়া যাইতেছে। ইনি কাচড়াপাড়ার বৈদ্যবংশীয় হরিনারায়ণ গুপ্তের দ্বিতীয় পুত্র। বাঙ্গালা ১২১৮ সালের ফান্তুন মাসে ইহার জন্ম হয়। ইহার পিতার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। তিনি স্বীয় কুল ক্রমাগত চিকিৎসা ব্যবসায় পরিত্যাগ পুর্ব্বক স্বগ্রামের নিকটবর্ত্তী এক কুঠীতে ৮ টাকা বেতনের একটী কর্ম্ম করিতেন। কলিকাতা যোড়াসাঁকোতে ঈশ্বর চন্দ্রের মাতামহের আলয়। মাতামহ রামমোহন গুপ্ত উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে চাকুরী করিতেন। তাঁহার অবস্থাও তাদৃশ ভাল ছিল না। ঈশ্বরচন্দ্রের বয়স যখন দশ বৎসর, তখন তাঁহার মাতৃবিয়োগ হয়। মাতৃবিয়োগের পর তিনি মাতামহের আলয়ে আসিয়া অধিকাংশ সময় থাকিতেন। এরূপ শুনিতে পাওয়া যায় যে, তিনি তৎকালে পড়াশুনাতে বড় অনাবিষ্ট ছিলেন। পাঠশালে যাইতেন বটে, কিন্তু পড়াশুনা অপেক্ষ খেলা ও দুষ্টামিতে বেশি মনোযোগী ছিলেন। বলিতে গেলে শিক্ষা যাহাকে বলে ঈশ্বরচন্দ্র তাহার কিছুই পান নাই। ইংরাজী শিক্ষা ত হইলই না; বাঙ্গালাও নিজে পড়িয়া যাহা শিখিলেন তাহাই একমাত্র সম্বল হইল। কিন্তু এই সম্বল লইয়াই তিনি অচিরকালের মধ্যে বাঙ্গালার সুকবি ও সুলেখক রূপে পরিচিত হইলেন।

 যৌবনের প্রারম্ভে পাথুরিয়াঘাটার গোপীমোহন ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র নন্দকুমার ঠাকুরের জ্যেষ্ঠপুত্র যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুরের সহিত তাঁহার আত্মীয়তা জন্মে। তাঁহাদেরই ভবনে তিনি অবসরকাল যাপন করিতেন। তাঁহাদেরই আশ্রয়ে, তাঁহাদেরই উৎসাহে, তাঁহার কবিত্বশক্তির স্ফূর্ত্তি হয়। তিনি অনেক সময় মুখে মুখে কবিতা রচনা করিয়া তাহাদিগকে শুনাইতেন; সখের কবির দলে গান বাধিতেন; বিশেষ বিশেষ ঘটনা ঘটিলে কবিতা রচনা করিয়া সকলের চিত্তবিনোদন করিতেন। এই যোগেন্দ্র মোহন ঠাকুরের প্ররোচনাতে, তাঁহারই সাহায্যে, বাঙ্গালা ১২৩৭ সালে, বা ইংরাজী ১৮৩০ সালে “সংবাদ-প্রভাকর” সাপ্তাহিক আকারে প্রকাশিত হয়। ঈশ্বরচন্দ্র তাহার সম্পাদন-ভার গ্রহণ করেন। সাপ্তাহিক প্রভাকর, প্রধানতঃ ইহার পদ্যময় প্রবন্ধ সকলের গুণে, সত্বর