পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
একাদশ পরিচ্ছেদ।
২৮১

একমাস কারাদও হয় সে সকল বিবরণ অগ্ৰেই দিয়াছি। মহাভারতের অনুবাদক স্বপ্রসিদ্ধ কালীপ্রসন্ন সিংহ মহোদয় ঐ এক হাজার টাকা জরিমান নিজে প্রদান করেন।

 প্রতিহিংসোদ্যত নীলকরগণ তখন “দীনবন্ধুকে ধরিতে না পারিয়া লংকে কারাগারে দিয়া এবং হিন্দু পেটি স্বটের সম্পাদক হরিশকে ধনে প্রাণে সার করিয়া নিবৃত্ত হইল। এদিকে দীনবন্ধু স্বীয় নির্দিষ্ট পথে অবাধে অগ্রসর হইলেন। “নবীন তপস্বিনী,” “বিয়ে পাগল বুড়ে,” “সধবার একাদশী,” “লীলাবতী,” “জামাইবারিক” প্রভৃতি অদ্ভুত হান্ত-রসাত্মক নাটক সকল পরে পরে প্রকাশ পাইতে লাগিল।

 শেষদশায় তিনি “সুরধুনী-কাব্য” ও “দ্বাদশ কবিতা” নামে দুইখানি পদ্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। ইহার পরে তিনি দুরারোগ্য বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হন এবং তাহার চরম ফল দারুণ বিস্ফোটকে তাঁহাকে শয্যাস্থ করে। সেই রোগেই ১৮৭৩ সালের নবেম্বর মাসে গতাস্থ হন। তিনি যখন মৃত্যুশয্যাতে শয়ান, তখন তাহার শেষ গ্রন্থ, “কমলে কামিনী” নাটক যন্ত্রস্থ। এই তার শেষ লাহিত্য রচনা। তিনি সৰ্ব্বজন-প্রিয় ছিলেন। তাঁহার চিরদিনের ৰন্ধু বঙ্কিমচন্দ্র, বলিয়াছেন—“র্তাহার স্বভাব তাদৃশ তেজী ছিলু না বটুে, বন্ধুর অনুরোধে বা সংসর্গ দোষে নিন্দনীয় কাৰ্য্যের সংস্পর্শ তিনি সব সময়ে এড়াইতে পারিতেন না; কিন্তু যাহা অসৎ, যাহাতে পরের অনিষ্ট আছে, যাহা পাপের কাৰ্য্য, এমন কাৰ্য্য দীনবন্ধু কখনও করেন নাই।”

 বিষয় কৰ্ম্মোপন্থক্ষে তিনি যত স্থানে গিয়াছিলেন, তন্মধ্যে কৃষ্ণনগরে অনেক কাল বাস করেন। এখানে তিনি স্থায়ীরূপে থাকিবার মানসে একটা বাসভবন নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। সেই কৃষ্ণনগরে বাস কালেই লাহিড়ী মহাশয়েয় সহিত তাহার আলাপ পরিচয় ও আত্মীয়তা জন্মে। লালুচী মহাশয়কে তিনি কি ভাবে দেখিতেন, তাহা তাহার প্রণীত “মুরধুনী কাব্য”হুইতে উদ্ধৃত নিম্নলিখিত কয়েক পংক্তি হইতে বিশেষরূপে বুঝিতে পারা যাইবে।

“পরম ধাৰ্ম্মিকবর এক মহাশয়,
‘সত্য-বিমণ্ডিতু তার কোমল-হৃদয়।
সারলের পুত্তলিক, পরহিতে রত,
সুখ দুঃখ সম জ্ঞান ঋষিদের মত।
জিতেন্দিয়, বিজ্ঞতম, বিশুদ্ধ বিশ্লেষ,