এই সকল কারণে অনতিকাল মধ্যে তাঁহার বিদ্যালয়ে অনেক বালক পড়িতে লাগিল।”
শ্রীপ্রসাদ যৌবনের প্রারম্ভে যে পরোপকার-প্রবৃত্তির পরিচয় দিয়াছিলেন, উত্তরকালেও তাহা প্রচুর পরিমাণে তাঁহার চরিত্রে প্রকাশ পাইয়াছিল। তিনি ইংরাজী, সংস্কৃত ও পারসী ভাষাতে বিশেষ ব্যুৎপন্ন ছিলেন; এবং সেজন্য কৃষ্ণনগরের জজের শেরেস্তাদারের পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। এরূপ শুনিয়াছি যে কার্য্যদক্ষতার গুণে পরিশেষে ডেপুটী কালেক্টরের পদে উন্নীত হন, কিন্তু সে পদ ভোগ করিতে পারেন নাই; তৎপূর্ব্বেই ভবধাম পরিত্যাগ করেন। যখন তিনি শেরেস্তাদারী পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তখন তাঁহার বেতন ৮০ টাকা মাত্র ছিল। তিনি মনে করিলে অবৈধ উপায়ে প্রভূত সম্পত্তি সঞ্চয় করিয়া রাখিয়া যাইতে পারিতেন। কিন্তু যে ধর্ম্মভীরুতা এই লাহিড়ীবংশের একটা প্রধান লক্ষণ দেখিতেছি, তাহা তাঁহাতেও প্রচুর মাত্রায় বিদ্যমান ছিল। সুতরাং সে সকল পথে কখনও পদার্পণ করেন নাই। প্রত্যুত এই ৮০ টাকা বেতন হইতে যথাসাধ্য গরীব দুঃখীর সাহায্য করিতেন। পূজার সময়ে এদেশের লোক কয়েকদিনের জন্য জগতের দুঃখ শোক ভুলিয়া, নববস্ত্র পরিধান করিয়া, উৎসবানন্দে আপনাদিগকে নিক্ষেপ করিয়া থাকে; গরীবের গরীব যে তাহারও প্রাণে এই সময়ে নববস্ত্র পরিবার সাধ হয়। শ্রীপ্রসাদের কোমল ও পরদুঃখকাতর হৃদয় কথঞ্চিৎ পরিমাণে গরীবদের সেই সাধ পূরণ করিবার জন্য ব্যগ্র হইত। তিনি পূজার সময়ে গরীব দুঃখীদের মধ্যে নববস্ত্র বিতরণ করিবার নিয়ম করিয়াছিলেন। তদ্ভিন্ন, সময়ে অসময়ে দীন জনের দুঃখ দেখিলেই তাঁহার দক্ষিণ হস্ত উন্মুক্ত হইত। তিনি গোপনে অনেক দান করতেন। আমি বিশ্বস্ত ব্যক্তির মুখে শুনিয়াছি, একবার তিনি একজন বিপন্ন আত্মীয়ের সাহায্যার্থ নিজ বেতনের অর্দ্ধেক দিয়া তাঁহাকে বলিয়া দিলেন, “কাহাকেও বলিও না।” ইহা কৃষ্ণনগরের লাহিড়ী বংশেরই অনুরূপ কার্য্য।
এতক্ষণ গুণধাম গোবিন্দ লাহিড়ী, মহাশয়ের পঞ্চ পুত্রের মধ্যে মধ্যম পুত্র কাশীকান্ত লাহিড়ীর শাখাস্থ ব্যক্তিগণের গুণাবলীরই কথা বলিতেছি। এতদ্ব্যতীত তাঁহার আর চারিটী পুত্র ছিল। তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ কৃষ্ণকান্ত বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হইয়া পূর্ব্ববঙ্গে ময়মনসিংহ জেলাতে গিয়া বাস করেন। তাঁহার শাখা এখনও সেখানে বিদ্যমান আছে। তাঁহাদের বিষয়ে বিশেষ কিছু জানি না।