পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫২
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

 বৃদ্ধ লাহিড়ী মহাশয়ের প্রতি কৃষ্ণনগরের সাধারণ লোকের যখন এই ভাব ছিল, তখন ভদ্রলোকদের কি ভাব ছিল, তাহা সকলেই অনুমান করিতে পারেন। সুতরাং সকল শ্রেণীর লোকেই তাঁহার কন্যার বিবাহে পরমানন্দিত হইয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই।

 তৎপরে দ্বিতীয় স্মরণ রাখিবার যোগ্য কথা, লাহিড়ী মহাশয়ের ছাত্রগণের তাহার প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি। ইহা স্মরণ করিলেও মন মুগ্ধ হয়। তিনি পেন্‌সন লইয়া কর্ম্ম হইতে অবসৃত হইয়া বসিলে এই গুরুভক্তির উজ্জ্বল প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া গেল। ইহা বলিতে কিছুই লজ্জা বোধ করিতেছি না, বরং আনন্দিত হইতেছি, তাঁহার পুরাতন ছাত্রগণের মধ্যে কেহ কেহ এই সময় হইতে ঠিক পুত্রের কাজ করিতে আরম্ভ করিলেন। তন্মধ্যে খ্যাতনামা স্বৰ্গীয় কালীচরণ ঘোষ মহাশয় সর্ব্বাগ্রগণ্য ছিলেন। ইনি নিজ গুরুর জন্য যাহা করিয়াছেন তাহার কিঞ্চিৎ উল্লেখ পরে করিব। অপরাপর অনুগত ছাত্রের মধ্যে অনেকে এখনও জীবিত আছেন। ইহার এখনও লাহিড়ী মহাশয়ের পরিবার পরিজনের পার্শ্বে দণ্ডায়মান আছেন; এবং সর্ব্ববিধ অবস্থায় উপদেশ, পরামর্শ, সাহায্যাদি দ্বারা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কার্য্য করিতেছেন। সুপ্রসিদ্ধ রাজা প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায় এই শ্রেণীগণ্য। ইনি পৃষ্ঠপোষক না হইলে শরৎকুমার নিজ ব্যবসাতে যে পরিমাণে উন্নতি করিয়াছেন তাহা করিতে পারিতেন না। বালী উত্তরপাড়া স্কুলে লাহিড়ী মহাশয়ের যে স্মৃতিফলক রহিয়াছে, তাহা প্রধানতঃ ইহার গুরুভক্তির নিদর্শন। ধন্য গুরু! যাহাকে একবার দেখিয়া জীবনে ভোলা যায় না। ধন্য ছাত্র! যাহারা আমরণ গুরুকে হৃদয়ের উচ্চতম স্থানে রাখিয়া পূজা করিতে পারেন। গুরুশিষ্যের সম্বন্ধ বর্ত্তমান সময়ে যাহা দাঁড়াইতেছে তাহা স্মরণ করিয়া এই ছবির প্রতি দৃষ্টিপাত করিতেও মুখ হয়। এই সফল ছাত্রের কথা ভাবিলেও আনন্দ হয়।

 লাহিড়ী মহাশয়কে ও তাঁহায় পরিবার পরিজনকে ইহারা যে ভাবে পরিচর্য্যা করিয়া আসিয়াছেন, তাহার বর্ণনা হয় না। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় ছাত্র না হইয়াও বন্ধুতা ও প্রীতিসূত্রে লাহিড়ী মহাশয়কে এমনি প্রীতি ও শ্রদ্ধা করিতেন যে তাঁহার কোনও প্রকার অভাব জানিলেই সাহায্য দানে মুক্ত হস্ত ছিলেন।

 ১৮৬৯ সালের আগষ্ট মাসে লীলাবতী পুত্রের মুখ দর্শন করিলেন। অন্নপ্রাশনের সময় এই পুত্রের নাম চারুচন্দ্র রাখা হয়। সে সময়েও কৃষ্ণনগরের