না পাইলে তাঁহাদের পূজার কোঠা অকর্ম্মণ্য হয় বলিয়া ঐ পুত্র তাহা বলপূর্ব্বক অধিকার করেন। ঐ অন্যায় অধিকার রহিত করিবার জন্য এক মোকদ্দমা উপস্থিত হয়। বিচারক ইহার তদন্ত জন্য ঐ স্থানে উপস্থিত হইল, অর্থী কহিলেন যে, “যদি প্রত্যর্থী আপনার সাক্ষাতে শুদ্ধ কহেন যে, এ ভূমি তাঁহার, তাহা হইলে আর আমি ঐ ভূমির দাবী রাখি না।” নসীরামের পুৎত্র পিতার স্বভাব জ্ঞাত থাকাতে তাহাকে বাটীর মধ্যে রাখিয়া ছিলেন। বিচারপতির আদেশে তাঁহাকে তদন্ত স্থানে আসিতে হইল। বিচারকর্ত্তা তাঁহাকে এ বিষয় জিজ্ঞাসা করিবামাত্র তিনি অতি ক্রোধভরে উত্তর করিলেন; “উহাকে (পুত্রকে) আমি ঐ ভুমি অধিকার করিতে বিশেষরূপে নিষেধ করিয়াছিলাম, তথাপি লক্ষ্মীছাড়া আমার কথা শুনে নাই, ঐ ভূমিতে আমার কোন স্বত্ব নাই।”
রামকৃষ্ণ নিজে যেমন সাধু ছিলেন, তেমনি সাধু সদাশয় ব্যক্তিদের সঙ্গেই মিশিতেন। জনকজননীর দৃষ্টান্ত ও সদুপদেশ বৃথা যায় নাই। তাঁহাদের সন্তানগণ বয়োবৃদ্ধিসহকারে তাঁহাদের দৃষ্টান্তের অনুসরণ করিতে লাগিলেন। জ্যেষ্ঠপুত্র কেশবচন্দ্র লাহিড়ী শৈশব হইতে গুরুজনের প্রতি ভক্তি ও বাধ্যতা প্রভৃতি সদ্গুণের পরিচয় দিতে লাগিলেন। যৌবনের প্রারম্ভে একবার তিনি গুরুজনের আদেশে গোয়াড়ি হইতে নিজস্কন্ধে এক মণ চাউলের বস্তা বহিয়া দিয়াছিলেন। আর একবার একদিন সন্ধ্যার সময়ে কেশবচন্দ্র দেখিতে পাইলেন যে পিতামহী ঠাকুরাণীর গৃহে উঠিবার পৈঠাটী ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। তখন কাহাকেও কিছু বলিলেন না; পরে পিতামহী শয়ন করিলে, পাড়ার দুই একটী অনুগত সমবয়স্ক বালককে সঙ্গে লইয়া, রাতারাতি, ইষ্টক প্রভৃতি সংগ্রহ পূর্ব্বক, পৈঠাটী মেরামত করিয়া ফেলিলেন। প্রাতে পিতামহী ঠাকুরাণী দেখিয়া বিস্মিত ও প্রীত হইয়া কহিলেন—“এ কেশবের কাজ আর কারু নয়।” কেশবকে তিনি এমনি চিনিয়াছিলেন।
কেশবচন্দ্র লাহিড়ীর জীবনের ঘটনা সকল সবিশেষ জানিবার উপায় নাই। কিন্তু জ্যেষ্ঠর প্রতি ভক্তিভাজন রামতনু লাহিড়ী মহাশয়ের যে প্রকার ভক্তি দেখিতাম তাহাতে বোধ হয় যে তাঁহার জ্যেষ্ঠের চরিত্র তাঁহার চরিত্র গঠন বিষয়ে বিশেষরক্ষপে কাজ করিয়াছিল। কেশবচন্দ্রের সাধুতার পরোক্ষ প্রমাণ কিছু কিছু আছে। তিনি যখন কলিকাতার সন্নিকটবর্ত্তী আলিপুরে জজ আদালতে কেরাণীগিরি কর্ম্মে নিযুক্ত ছিলেন, তখন ঐ কর্ম্ম ব্যতীত তিনি