পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, & e রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র ইহাই যে দেশে ব্যবস্থা ; সে দেশের কল্যাণ কিসে ? ইহার উত্তরে বলা যাইতে পারে— যেহেতু মন্থয্যের প্রাণদানের ন্যায় মহৎ দান আর হইতে পারে না—ব্যাধিতের ব্যাধি মোচনের ন্যায় মহৎ কাৰ্য্য আর কিছু হইতে পারে না—ঠিক সেই হেতু এই মহৎ দানকে জীবিকাঞ্জনে বিনিয়োগ ভারতবর্মের ভাল লাগে না । মতুষ্যের প্রাণদানকে যিনি ব্যবসায় করিয়াছেন—যিনি উহাকে জীবিকার্জনের উপায় করিয়া লইয়াছেন,—তিনি জীবিকার জন্য প্রাণদানের বিনিময়ে তুচ্ছ অর্থ গ্রহণে বাধ্য হন, ভারতবর্ষের ধাতুর সহিত ইহ সম্পূর্ণ মিলে না। অথচ ব্যবসায়ী চিকিৎসক না থাকিলে কোন সমাজই চলে না। তিনি থাকুন–কিন্তু ভারতবর্ষ তাহাকে ষোল আন সম্মান দিতে অসমর্থ। জ্যোতিবিদ্যার মত মহতী বিদ্যাকে ও র্যাহারা জীবিকার উপায় করিয়াছেন,তাহাদিগকেও ঠিক এই কারণে ভারতবর্ষ সমুচিত সম্মান দিতে কুষ্ঠিত হইয়াছেন। অর্থবিনিময়ে প্রাণদানের ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠায় ভারতবর্ষ অগত্য সম্মত হইয়াছেন, কিন্তু অর্থ বিনিময়ে বিদ্যাদানের ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠায় ভারতবর্ষ আদৌ সম্মত হইতে পারেন নাই। কেন না, ভারতবর্ষের হিসাবে প্রাণের অপেক্ষা বিদ্যার গৌরব অধিক । ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস যাহা আছে, তাহার আলোচনাতে ইহাই দেখা যায়। ভারতবর্যের প্রাচীন সমাজে বেদ ও বিদ্য সমর্থিক ছিল । তৎকালে যে বিদ্যা ছিল তাহার সমষ্টির নামই বেদ । এই বেদকে বেদপন্থী সমাজ ব্রহ্মের সহিত অভিন্ন বলিয়া ভাবিতেন—বেদ শব্দরাশি এবং শব্দই ব্রহ্ম । তিনি বলেন—শব্দ ব্রহ্মস্বরূপ, ইহা অনাদি— ব্যক্ত চরাচরের পূৰ্ব্বেই ইহা বিদ্যমান ছিল। এই শব্দ হইতেই—এই বেদ হইতেই চরাচরের অভিব্যক্তি হইয়াছে। বেদ অপৌরুষেয় ; কোন পুরুষে ইহার প্রণয়ন বা রচনা করেন নাই ; স্বয়ং স্বষ্টিকৰ্ত্ত বিধাতা, যিনি স্বষ্টিকৰ্ত্ত হইলেও পুরুষমাত্র, তিনিও ইহার স্বষ্টি করিতে সমর্থ নহেন । এই অনাদি বাণী তাহার বদন হইতে নিঃস্থত হইয়াছিল মাত্র—আর র্যাহারা ভাগ্যবান, র্যাহারা ক্ষমতাবান, র্যাহাঁদের দেখিবার শক্তি ছিল, তাহারা সেই বিধাতৃমূখনিৰ্গত মূৰ্ত্তিমতী বাণী দেখিয়াছিলেন মাত্র, যাহাদের শুনিবার শক্তি ছিল, তাহারা তাহ শুনিয়াছিলেন মাত্র। র্তাহারা ঋষি, তাহারা দ্রষ্ট,—তাহারা যাহা দেখিয়াছেন, তাহাই ইতর সাধারণকে বলিয়াছেন, অতএব তাহার প্রবক্তা মাত্র। ইহা একবারে কবিকল্পনা নহে, ইহার মধ্যে বৈজ্ঞানিক সত্য নিহিত আছে। হালের ভাষায় দৃষ্টান্ত সহকারে এইরূপে সৰ্ব্বসাধারণকে বুঝান যাইতে পারে। ধর, উইলিয়াম সেকল্পীয়ার নামক কবি ম্যাকবেথ নামক কাব্য রচনা করিয়া গিয়াছেন। লোকে জানে, ম্যাকবেথ কাব্যের রচনাকারী উইলিয়াম সেক সপীয়ার । এই ম্যাকবেথ লোকটা বড় মন ছিল না, তোমার আমার মত ভদ্রলোক সাজিয়া সে জীবনযাত্রা নিৰ্বাহ করিতে পারিত। কিন্তু তাহার চিত্ত দুর্বল ছিল এবং সেই দৌৰ্ব্বল্যের ছল পাইয়া মনুষ্যের প্রবল শত্রু শয়তান তাহার উপর অধিকার স্থাপন করিল । সংসারের পথ পিচ্ছিল ; যেখানে পিচ্ছিলতা একটু অধিক, সেইখানেই উহাকে এক একটা ধাক্কা দিয়া ক্রমে তাহাকে এমন পঙ্কে ডুবাইয়াছিল, যেখান হইতে হতভাগ্যের আর উদ্ধারের আশা থাকিল না। মন্থয্যের আদি দম্পতি যে দিন ধরাধামে বিচরণ আরম্ভ করিয়াছিলেন, সেই দিন হইতেই শয়তানের এই শয়তানী আরম্ভ, ইহা হইতেই সংসারে পাপ ও মৃত্যু। বস্তুতঃ সংসারে এই পাপ পুণ্যের অধিকার আরম্ভ মহুয্যের আবির্ভাবের সময় হইতে