পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Yoጓ• রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র তখন সতেজে অস্কুরোদগম হুইতেছিল। পঞ্চশতবর্ষব্যাপিনী অশান্তির পর যখন আমরা পরাক্রাস্ত পাশ্চাত্ত্যজাতির রাজছত্ৰতলে আশ্রয় লাভ করিয়া প্রথম শাস্তির মুখ দেখিতে পাইয়াছিলাম, তখনই এই আশালতার অন্ধুবোদগম হইয়াছিল। যখন পাশ্চাত্য সভ্যতার তীব্র আলোক আমাদের মুদিত নেত্রকে সহসা খুলিয়া দিল, তখন আমরা যেন দীর্ঘ নিদ্রার অবসানে সহসা প্রবুদ্ধ হইয়া নূতন ভাস্করের প্রভাতকিরণ দেখিতে পাইলাম, আমাদের মৃতকল্প শরীরে নব জীবনের সঞ্চার হইল। যখন দম্য তস্করের হস্ত হইতে আমাদের ধন প্রাণ নিরাপদ হইল, যখন প্রবঞ্চক প্রতিবেশীর হস্ত হইতে সন্ত্রম রক্ষার জন্য রাজদ্বার অবারিতভাবে উন্মুক্ত হইল, যখন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালযাদির প্রতিষ্ঠা দ্বারা অভিনব সভ্যতা ও বৃহত্তর জগতের সহিত আমাদের নূতন ঘনিষ্ঠ ও আত্মীয় সম্পর্ক স্থাপিত হইল, যখন ষ্টীম এঞ্জিন ও টেলিগ্রাফ এই নৃত্তন সভ্যতার অজেয় বিক্রম ও অতুল ঐশ্বৰ্য্য ও অমিত মহিমার সহিত আমাদের পরিচয় স্থাপন করিয়া আমাদিগকেও সেই বিক্রমের ও ঐশ্বৰ্য্যের ও মহিমাব অংশভাকৃ করিবার আশা দিল, তখন আমাদের আশালত যে অচিবে পুষ্পপল্লবে স্থশোভিত হইয়া উঠিবে, তাহার সংশয় মাত্রও নিরাকৃত হইয়াছিল। কিন্তু সে অধিক দিনের কথা নহে ; সিপাহীযুদ্ধের বিপ্লবাস্তে যে মহীয়সী মহারাঞ্জী ভারতের সাম্রাজ্যভার স্বহস্তে গ্রহণ করিয়া বিংশ কোটি প্রজার হৃদয় অভয়বাণী দ্বার। আশ্বস্ত ও আনন্দিত করিলেন, সেই পূজনীয়া মহিলা আজ পর্য্যস্ত বেলাব প্রবলয় পরির্থীকুতসাগর বম্বন্ধরার ঐশ্বৰ্য্যমহিমমণ্ডিত সিংহাসনে উপবিষ্ট আছেন ; কিন্তু তাহার কোটি প্রজার হৃদয়ে যে আশ্বাসের ও পুলকের সঞ্চার হইয়াছিল, তাহা যেন অস্কুরেই ছিন্ন হইয়াছে। পাশ্চাত্ত্য জাতির সম্পর্কে আসিয়া আমরা যে ভাবী ঐশ্বর্ঘ্যের স্বপ্ন দেখিতেছিলাম, সে স্বথস্বপ্ন যেন ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। যে মোহের ঘোরে আমরা এত দিন আচ্ছন্ন ছিলাম, সে মোহের ঘোর যেন কাটিয়া গিয়াছে। কেহ যেন আমাদের কানে কানে দৃঢ় স্বরে বলিয়া দিয়াছে, তোমরা দীন, কুটারমধ্যে ছিন্ন ক স্থায় শয়ন করিয়া তোমরা ঐশ্বৰ্য্যের স্বপ্ন দেখিতেছিলে, সে স্বপ্ন সফল হইবার নহে। পরন্তু তোমরা ভিক্ষুক ; ভিক্ষুকের জীবনে শ্রেয়োলাভের আশা বিড়ম্বনা। গত কতিপয় বর্ষ ধরিয়া যাহারা ভারতবর্ষের ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়াছেন, তাহাদিগকে অধিক কথা খুলিয়া বলবার প্রয়োজন নাই। ফলে আমরা যে পথ অবলম্বন করিয়া এত দিন চলিতেছিলাম, সে পথ যেন ঠিক পথ নহে ; এখন কোন নূতন পথ আমাদের অবলম্বনীয়, তাহার নির্ণয়ই আমাদের সামাজিকগণের পক্ষে প্রধান কৰ্ত্তব্য হইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু পথভ্রান্ত পথিক যেমন দিশাহারা হইয়া কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়ে, আকাশের ধ্রুবতারা তখন তাহার সংশয়াকুল চিত্তে বিশ্বাস স্থাপনে সমর্থ হয় না, আমরাও সেইরূপ দিশাহারা হইয়া গন্তব্য পথ নির্ণয়ে অসমর্থ ও কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িয়াছি ; কোন অনির্দেশু স্থান হইতে কালে মেঘ আসিয়া আমাণের সেই ক্ষীণপ্রভ ধ্রুবতারাটিকেও ঢাকিয়া ফেলিয়াছে। যদি কেহ মনে করেন, আমি কোন কাল্পনিক বিভীষিকায় আতঙ্কিত হইয়া আপনিই প্রতারিত হইতেছি ও অন্তকে অমূলক আশঙ্কায় উত্তেজিত করিবার চেষ্টা পাইতেছি,