পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা ; মাতৃমন্দির 88 y -গন্তব্য পথের নির্ণয় করিতে হইবে। - যুগে যুগে যুগধৰ্ম্ম সংস্থাপনের জন্য যিনি সস্তৃত হইয়া থাকেন, তাহার সম্ভব প্রতীক্ষায় র্যাহারা বসিয়া আছেন, একালের যুগধর্মের লক্ষণ কি, তাহার আলোচনা না করিলে তাহাদের চলিবে না। সুখের বিষয় যে, বিধাতৃপ্রেরণায় মানবসমাজে যখন যে হাওয়া বহে, তাহাতেই সেই যুগধৰ্ম্ম নিরূপিত করিয়া দেয়। আমরা সাহিত্যসেবীরা গর্বের সহিত অনুভব করিতেছি যে, অধুনাতন বঙ্গসাহিত্যক্ষেত্রে যিনি আমাদের সকলের অগ্রণী ও পথপ্রদর্শক ছিলেন, বিধাতা তাহার মুখ দিয়াই একালের যুগধৰ্ম্মের স্বরূপ ব্যাখ্য' আমাদিগকে জানাইয়াছেন । শু্যামা মায়ের পাগল ছেলে কবি রামপ্রসাদ ৰ্তাহার পাগলী মায়ের চরণতলে আপনার মন প্রাণ ষোল আন উৎসর্গ করিয়া গিয়াছিলেন। এই আত্মনিবেদন উপলক্ষ্যে তিনি যে গীত গাইয়াছেন, তাহাব ধ্বনি আমাদের কানের ভিতর প্রবেশ করিয়া চিরদিন ধরিয়া মরমেব তারে ঝঙ্কার দিবে। সেই ঘোররূপ মহারৌদ্রী গলত্রুধিরচচ্চিতা শ্রামাঙ্গিনী জননীর হস্তধৃত করাল খড়গ রামপ্রসাদের হৃদয়ে কোনরূপ আতঙ্ক জন্মাইত না, তাহার রাঙ্গ পায়ের রক্ত জবার অভিমুখে তাহার দৃষ্টি সৰ্ব্বদা নিবদ্ধ থাকিত, এবং তিনি সেই রক্ত জবায় দৃষ্টি রাখিয়া তন্ময় হইয়। নিরবধি আনন্দস্বধা পান করিতেন। তাহার চোখে মায়ের যে মূৰ্ত্তি প্রতিভাত হইয়াছিল, তাহা অন্যের চোখে হয় নাই । সাধকভেদে যেমন জননীর মূৰ্ত্তিভেদ হয়, সেইরূপ দেশভেদে ও কালভেদে তিনি ভিন্ন ভিন্ন মূৰ্ত্তি গ্রহণ করেন। “বন্দেমাতরম" এই পঞ্চাক্ষর মম্বে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র সেই শুামাঙ্গিনী জননীকে যে মূত্তিতে দেখিয়াছিলেন, সেই মৃত্তি আমাদের উপস্থিত যুগধর্মের অন্তকূল মূৰ্ত্তি। বঙ্কিমচন্দ্রের পূৰ্ব্বে আব কোন বাঙ্গালী মায়ের এই মূৰ্ত্তি এমন স্পষ্টভাবে দেখিতে পান নাই, এবং সেই মূৰ্ত্তিকে ইষ্টদেবতারূপে স্বীকার করিয়৷ তদুপযোগী সাধনার সময় পান নাই । বঙ্কিমচন্দ্রের কিছু দিন পূৰ্ব্ব হইতেই বাঙ্গলার সাহিত্যসেবীরা এই মূৰ্ত্তি দর্শনের জন্য বাঙালীকে প্রস্তুত করিতেছিলেন। প্রবাসযাত্রী মধুসূদন দত্ত “সাধিতে মনের সাধ, ঘটে যদি পরমাদ,” এই চিন্তায় যখন ব্যাকুল হইয়াছিলেন, তখন তিনি ক্ষণেকের জন্য এই “শু্যামা জন্মদার” প্রতি অশ্রুসিক্ত লোচনে চাহিয়াছিলেন। যখন হেমচন্দ্র এই জননীকে আহবান করিয়া তাহার ভেরী বাজাইতেন, তখন আমাদের হৃৎপিণ্ড যেমন স্পন্দিত হইত, তেমন আর র্তাহার অন্য কোন আহবানে ঘটিত না । বঙ্গদর্শনের প্রথম [ দ্বিতীয় ] বৎসরে, ঐ পত্রিকায় “দশ মহাবিদ্যা” নামে একটি ক্ষুদ্র প্রবন্ধ বাহির হইয়াছিল। ঐ প্রবন্ধের লেখক কে, তাহা আপনারা অবগত আছেন। র্তাহার সহচর ও সহবত্তীরা একে একে অন্তহিত হইয়াছেন ও হইতেছেন ; তিনি আমাদিগকে উপদেশ দিবার জন্য এই সাহিত্যসম্মিলনে উপস্থিত হইতে পারিলে আমরা ক্লতাৰ্থ হইতাম। আমরা সাহিত্যসম্মিলনে সমবেত হইয়া র্তাহার দীর্ঘ জীবন প্রার্থনা করিতেছি। ঐ প্রবন্ধে তিনি আমাদের জননীর স্বীকৃত মুক্তিসকলের বিশ্লেষণ করিয়া দেখাইয়াছিলেন যে, জননী আপন হাতে আপন মাথা কাটিয়া ছিন্নমস্ত সাজিয়াছেন ; তাহার ছিন্ন কণ্ঠ হইতে সমুদগত শোণিতধারা ডাকিনী যোগিনীতে পান করিতেছে, কোন তারিখে কোন স্থানে জননী অাপন