পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
৫৭

 এ দিকে, শকুন্তলা; অতিথিপরিচর্য্যার ভার গ্রহণ করিয়া, একাকিনী কুটীরদ্বারে উপবিষ্টা আছেন; দৈবযোগে দুর্বাসা ঋষি আসিয়া, তাঁহাকে উদ্দেশ করিয়া, কহিলেন, আমি অতিথি। শকুন্তলা, রাজার চিন্তুায় নিতান্তু মগ্ন হইয়া, এক কালে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হইয়াছিলেন, সুতরাং দুর্ব্বাসার কথা শুনিতে পাইলেন না। দুর্ব্বাসা অবজ্ঞাদর্শনে রোষবশ হইয়া কহিলেন, আঃ পাপীয়সি! তুই অতিথির অবমাননা করিলি। তুই যার চিন্তায় মগ্ন হইয়া আমায় অবজ্ঞা করিলি—আমি অভিশাপ দিতেছি— স্মরণ করাইয়া দিলেও, সে তোরে স্মরণ করিবেক না।

 প্রিয়ংবদা, শুনিতে পাইয়া, ব্যাকুল হইয়া কহিতে লাগিলেন, হার! হায়! কি সর্ব্বনাশ ঘটিল। শূন্যহৃদয়া শকুন্তলা কোনও পূজনীয় ব্যক্তির নিকট অপরাধিনী হইল। এই বলিয়া, সেই দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া, প্রিয়ংবদা কহিতে লাগিলেন, সখি! যে সে নয়, ইনি দুর্ব্বাসা, ইঁহার কথায় কথায় কোপ; ঐ দেখ, শাপ দিয়া রোষভরে সত্বরে প্রস্থান করিতেছেন। অনসূয়া কহিলেন, প্রিয়ংবদে! বৃথা আক্ষেপ করিলে আর কি হইবে বল? শীঘ্র গিয়া পায় ধরিয়া ফিরাইয়া আন; আমিও এই অবকাশে, কুটীরে গিয়া, পাদ্য অর্ধ প্রভৃতি প্রস্তুত করিয়া রাখিতেছি। প্রিয়ংবদা দুর্ব্বাসার পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন। অনসূয়া কুটীরাভিমুখে প্রস্থান করিলেন।