পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ । ঘড়িতে আটটা বাজিয়া গেল । সতীশ চোঁকাটের বাহিরে জুতা খুলিয়া রাখিয়া তক্তপোষে পাতা শাদা ধবধবে বিছানাটির উপর গিয়া বসিল এবং ঘরের অন্তান্ত আসবাবগুলির মনে মনে পরীক্ষা লইতে লাগিল। প্রথমেই নজর পড়িয়া গেল একটি ছোট শেলফের উপরে। কতকগুলি বই সাজানো ছিল, সতীশ উঠিয়া গিয়া একখানা সংগ্ৰহ করিয়া আনিল এবং প্রথম পাতা উন্টাইতেই দেখিতে পাইল, ইংরাজি অক্ষরে ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নাম লেখা। সে বইখানি রাখিয়া দিয়া আরও তিন-চারিখানি বই খুলিয়া ওই একই নাম দেখিয়া বইগুলি যথাস্থানে রাখিয়া দিয়া ফিরিয়া আসিয়া বসিল । মোক্ষদা বাধা স্থ কায় তামাক সাজিয়া আনিল । সতীশ ছক হাতে লইয়া বলিল; বির ঘরটি চমৎকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, উঠতে ইচ্ছে করে না। মোক্ষদা একটুখানি হাসিয়া বলিল, উঠবেন কেন বাবু, বন্ধন। এ ঘরটি কিন্তু আমার নয়, আর একটি মেয়ের । . সতীশ প্রশ্ন করিল, তিনি কোথায়? মোক্ষদা বলিল, সে এক বাবুদের বাসায় কাজ করে । আসতে প্রায়ই রাত হয়ে যায়, তাই ঘরের চাবি আমার কাছে থাকে । আমাকে মাসি বলে ভাকে । সতীশ বলিল, তা ডাকুক, কিন্তু ভুবনবাবুটি আসবেন কখন ? ঝি বিক্ষিত হইয়া জিজ্ঞাস করিল, ভুবনবাবু আবার কে ? ভুবনচন্দ্র মুখুয্যে—চেনো না ? অকস্মাৎ ঝি স্ক্র প্রসারিত করিল—ও ? আমাদের মুখুয্যেমশাই ? না না, তাকে আর আসতে হবে না। কেন, মারা গেছেন নাকি ? - মোক্ষদা দুই চক্ষু দৃপ্ত করিয়া বলিল, না, মারা যাননি, কিন্তু গেলেই ছিল ভাল । তিনি বামুনমাহষ, বর্ণের গুরু, আমাদের মাথার মণি, নারায়ণতুল্য। তাকে অভক্তি করচিনে, তার চরণের ধুলো নিচ্চি ; কিন্তু কোনদিন দেখা পেলে তিনটি ক্যাটা মুখে গুনে মারব, তবে আমার নাম মোক্ষদা । সতীশ হাসিয়া উঠিল, বলিল, রাগের মাথায় বামুনমানুষকে যেন অভক্তি করে মেরে বোলো না ! বেশ ভক্তি করে গুনে গুনে মেরো, তাতে পাপ হবে না । কিন্তু তিনি লোকটি কে ? মোক্ষা উদ্বতভাবে বলিয়া উঠিল, লোকটির পরিচয় জার কি দেব বাবু, তিনি