বিশ্বম্ভর । কিন্তু জেনে সুবিধেটা কি হচ্ছে শুনি । এ মামা নয়, ভাগ্নে । ওকথা ষূণাগ্রে কানে গেলে ভিটেয় তোমার সন্ধ্যে দিতেও কাউকে বাকী রাখবে না। ধরবে আর দুম করে গুলি করে মারবে। এমন কত গ্ণ্ডা এরই মধ্যে মেরে পুঁতে ফেলেচে জানো ? ভয়ে কেউ কথাটি পর্য্যন্ত কয় না ।
এককড়ি । হাঁ:–কথা কয় না! মগের মুল্লুক কি-না !
বিশ্বম্ভর । আরে মাতাল যে ! তার কি হুঁশ, পবন আছে, না, দয়া-মায়া আছে ! বন্দুক-পিস্তল ছুরি-ছোরা ছাড়া এক পা কোথাও ফেলে না । মেরে ফেললে তখন করবে কি শুনি ?
এককড়ি । তুই ত সেদিন সদরে গিয়েছিলি—দেখেচিস তাকে ?
বিশ্বস্তর । না, ঠিক দেখিনি বটে, তবে সে দেখাই । ইয়া গাল-পাট্টা, ইয়া গোফ, ইয়া বুকের ছাতি, জবাফুলের মত চোখ ভাঁটার মত বন বন করে ঘুরচে—
এককড়ি । বিশু, তবে পালাই চ’ ।
বিশ্বম্ভর । আরে পালিয়ে ক'দিন তার কাছে বাঁচবে নন্দীমশাই ? চুলের ঝুটি ধরে টেনে এনে খাল খুঁড়ে পুঁতে ফেলবে ।
এককড়ি । কি তবে হবে বল ? মাতালটা যদি বলে বসে শাস্তিকুঞ্জেই থাকব ?
বিশ্বম্ভর । কতবার ত বলেচি নন্দীমশাই, এ কাজ ক'রো না, ক’রো না, ক'রো না । বছরের পর বছর খাতায় কেবল শান্তিকুঞ্জের মিথ্যে মেরামতি খরচই লিখে গেলে, গরীবের কথায় ত আর কান দিলে না ।
এককড়ি । তুইও ত কাছারির বড় সদার, তুইও তো—
বিশ্বম্ভর। দেখ, ও-সব শয়তানি ফন্দি ক’রো না বলচি । আমার ওপর দোষ চাপিয়েছ কি-ওগো ; ওই যে একটা পাল্কী দেখা যায়!
[নেপথ্যে বাহকদিগের কণ্ঠধ্বনি শুনা গেল। বিশ্বম্ভর পলায়নোদ্যত এককড়ির হাতটা ধরিয়া ফেলিতেই সে নিজেকে মুক্ত করিবার চেষ্টা করিতে করিতে ]
এককড়ি । ছাড়না হারামজাদা ।
বিশ্বম্ভর । ( অনুচ্চ-চাপা কষ্ঠে ) পালাচ্চো কোথায় ? ধরলে গুলি করে মারবে যে !
[এমনি সময় পালকী সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইতে উভয়ে স্থির হইয়া দাড়াইল । পালকীর অভ্যন্তরে জমিদার জীবানন্দ চৌধুরী বসিয়াছিলেন ; তিনি ঈষৎ একটুখানি মুখ বাহির করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন ]
জীবানন্দ । ওহে, এ গ্রামে জমিদারের কাছারি-বাড়িটা কোথায় তোমরা কেউ বলে
দিতে পার ?