পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰন্থ ভয় নাই থাকুক। কিন্তু ছেলেমাছৰ হইলেও এটা বুঝিলাম, আজও যাহার শষ্য ত্যাগ করিয়া উঠিবায় ক্ষমতা হয় নাই, সেই রোগীকে এই বনের মধ্যে একাকী ৰে মেয়েটি বাচাইয়া তুলিবার ভার লইয়াছিল, সে কতবড় গুরুভায় ! দিনের পর দিন রান্ত্রির পর রাত্রি তাহার কত সেবা, কত শুশ্রষা, কত ধৈর্য্য, কত রাত-জাগা ! সে কত বড় সাহসের কাজ ! কিন্তু যে বস্তুটি এই অসাধ্য-সাধন করিয়া তুলিয়াছিল তাহার পরিচয় যদিচ লেদিন পাই নাই, কিন্তু আর একদিন পাইয়াছিলাম । কিরিবার সময় মেয়েটি আর একটি প্রদীপ লইয়া আমার আগে আগে ভাঙা প্রাচীরের শেষ পর্য্যন্ত আসিল । এতক্ষণ পৰ্য্যস্ত সে একটি কথাও কহে নাই, এইবার আস্তে আস্তে বলিল, রাস্ত পর্যন্ত তোমায় রেখে আসব কি ? বড় বড় আমগাছে সমস্ত বাগানটা যেন একটা জমাট অন্ধকারের মত বোধ হইতে ছিল, পথ দেখা ত দূরের কথা, নিজের হাতটা পৰ্য্যন্ত দেখা যায় না। বলিলাম, পৌছে দিতে হবে না, শুধু আলোটা দাও। সে প্রদীপটা আমার হাতে দিতেই তাহার উৎকণ্ঠিত মুখের চেহারাটা আমার চোখে পড়িল। আস্তে আস্তে সে বলিল, একলা যেতে ভয় করবে না ত ? একটু এগিয়ে দিয়ে জাসব ? মেয়েমানুষ জিজ্ঞাসা করে, ভয় করবে না ত! স্বতরাং মনে যাই থাকৃ, প্রত্যুত্তরে শুধু একটা কথা না বলিয়াই অগ্রসর হইয়া গেলাম। সে পুনরায় কহিল, ঘন-জঙ্গলের পথ, একটু দেখে দেখে পা ফেলে যেয়ে । সৰ্ব্বাঙ্গে কাটা দিয়া উঠিল, কিন্তু এতক্ষণে বুঝিলাম উদ্বেগটা তাহার কিসের জন্ত এবং কেন সে আলো দেখাইয়া এই বনের পথটা পার করিয়া দিতে চাহিতেছিল । হয়ত সে নিষেধ শুনিত না, সঙ্গেই যাইত, কিন্তু পীড়িত মৃত্যুঞ্জয়কে একাকী ফেলিয়া যাইতে বোধ করি তাহার শেষ পর্য্যন্ত মন সরিল না । কুড়ি-পচিশ বিঘার বাগান। সুতরাং পথটা কম নয় ! এই দারুণ অন্ধকারের মধ্যে প্রত্যেক পদক্ষেপই বোধ করি ভয়ে ভয়ে করিতে হইত, কিন্তু পরক্ষণেই মেয়েটির কথাতেই সমস্ত মন এমনি আচ্ছন্ন হইয়া রহিল যে, ভয় পাইবার তার সময় পাইলাম না। কেবল মনে হইতে লাগিল, একটা মৃতকল্প রোগী লইয়া থাকা কত কঠিন। মৃত্যুঞ্জয় ত যে কোন মুহূর্তেই মরিতে পারিত, তখন সমস্ত রাত্রি এই বনের মধ্যেমেয়েটি একাকী কি করিত ! কেমন করিয়া তাহার সে রাতটা কাটিত ৷ এই প্রসঙ্গের অনেকদিম পরের একটা কথা আমার মনে পড়ে। এক আত্মীয়ের মৃত্যুকালে আমি উপস্থিত ছিলাম। অন্ধকার রাজি-বাটীতে ছেলে-পুলে ঢাকা Rey