পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন উঠবে, না হয়, একেবারে উচ্ছ স্থল পশু হয়ে দাড়াবে। জগতের সহজ, সরল, স্বাভাবিক শ্ৰী আর চোখের সামনে থাকে না। পরায়ত্ত মন-গড়া অস্কায়ের বোধের দ্বারা সমস্ত মনকে শঙ্কায় ত্রস্ত মলিন করে রাখেন । সেদিন আশ্রমে যা দেখে এসেচি সে কি সংযম ও ত্যাগের শিক্ষণ ? ওরা পেয়েচে কি ? পেয়েচে অপরের দেওয়া দুঃখের বোঝা, পেয়েচে অনধিকার, পেয়েচে প্রবঞ্চিতের ক্ষুধা । চীনাদের দেশে জন্ম থেকে মেয়েদের পা ছোট করা হয়, পুরুষেরাও তাকে বলে সুন্দর, সে আমার সয়, কিন্তু মেয়েদের সেই নিজেদের পঙ্গু, বিকৃতি পায়ের সৌন্দর্য্যে যখন নিজেরাই মোহিত হয় তখন আশা করার কিছু থাকে না। আপনার নিজেদের কৃতিত্বে মগ্ন হয়ে রইলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, বাবার কেমন আছ বল তো ? ছেলেরা একবাক্যে বললে, খুব ভাল আছি। একবার ভাবলেও না। ভাবাটাও তাদের শেষ হয়ে গেছে, এমনি শাসন । নীলিমাদিদি আমার পানে চেয়ে বোধ করি এর উত্তর চাইলেন, কিন্তু বুক চাপড়ে কাদা ভিন্ন আমি আর এ-কথার জবাব খুজে পেলাম না। মনে মনে ভাবলাম, ভবিষ্যতে এরাই আনবে দেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে । হরেন্দ্ৰ কহিল, ছেলেদের কথা যাক, কিন্তু রাজেন, সতীশ এরা তো যুবক ? এরাও তো সৰ্ব্বত্যাগী ? কমল বলিল, রাজেনকে আপনার চেনেন না, সুতরাং সেও যাক । কিন্তু বৈরাগ্য যৌবনকেই তো বেশি পেয়ে বসে। ও যেখানে শক্তি, সেখানে বিরুদ্ধ-শক্তি ছাড়া তাকে বশ করবে কে ? হরেন্দ্র বলিল, রাগ ক’রো না কমল, কিন্তু তোমার রক্তে তো বৈরাগ্য নেই। তোমার বাবা ইয়ুরোপিয়ান, তার হাতেই তোমার শিশু-জীবন গড়ে উঠেচে । মা এদেশের, কিন্তু তার কথা না তোলাই ভাল। দেহে রূপ ছাড়া বোধ হয় সেদিক থেকে কিছুই পাওনি। তাই পশ্চিমের শিক্ষায় ভোগটাকেই জীবনের সবচেয়ে বড় বলে জেনেচ । কমল কহিল, রাগ করিনি হরেনবাবু। কিন্তু এমন কথা আপনি বলবেন না । কেবলমাত্র ভোগটাকেই জীবনের বড় করে নিয়ে কোন জাত কখনো বড়ো হয়ে উঠতে পারে না । মুসলমানের যখন এই ভুল করলে তখন তাদের ত্যাগও গেলো, ভোগও ছুটলো। এই ভুল করলে ওরাও মরবে। পশ্চিম তো আর জগৎ-ছাড়া নয়, সেবিধান উপেক্ষা করে কারও বাঁচবার যে নেই। এই বলিয়া সে একমুহূৰ্ত্ত মৌন থাকিয়া কহিল, তখন কিন্তু মুচকে হেলে আপনারাও বলবার দিন পাবেন, কেমন । বলেছিলাম তো ! দিন-কয়েকের নাচন-ক্টোদন ওদের যে ফুরুবে সে আমরা জানতাম। R© a=లీ