পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ থাকে, “তাঁর আর কি ! ও অমন হইয়া থাকে,—পুরুষের দোষ নেই । এল বাহিরে এস।” সেও তখন হাসিমুখে বাহির হয় এবং গলা বড় করিয়া প্রচার করিতে থাকে, নারীর পদস্খলন কিছুতেই মার্জন করা যাইতে পারে না। ঠিক ত! যে কারণেই হোক, যে নারী একটিবার মাত্রও ভুল করিয়াছে, হিন্দু তাহার সহিত কোন সংশ্রব রাখে না। ক্রমশঃ ভুল যখন তাহার জীবনে পাপে স্বপ্রতিষ্ঠিত হয়, দিন দিন করিয়া যখন তাহার সমস্ত নারীত্ব নিঙড়াইয়া বাহির হইয়া যায়—যখন সে বেষ্ঠা—তখন, আবার তাহার অভাবে হিন্দুর স্বৰ্গও সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর হয় না। এতই তাহার প্রয়োজন। দেশের লোক আদর করিয়া যেন শ্ৰীকৃষ্ণের কালে সোনা’, ‘কালো মাণিক প্রভৃতি অক্টোত্তর-শতনাম দিয়াছিল, সংস্কৃত-সাহিত্যেও বোধ করি বেতার আদরের নাম তার চেয়ে কম নয়। এইসকল হইতেই বুঝিতে পার যায়, স্বার্থপরতা ও চরিত্রগত পাপ-বুদ্ধি নর-নারী কাছার অধিক। এবং সমাজ হইতে এই পাপ বহিষ্কৃত করিতে হইলে শাস্ত্রের কড়া আইন-কামুন কাহার সম্বন্ধে অধিক থাকা উচিত, এবং সামাজিক জীবন বিশুদ্ধ রাখা উদ্দেশ্য হইলে নর-নারীর কাহাকে অধিক চোখে চোখে রাখা কৰ্ত্তব্য, এবং শাস্তি কাহাকে অধিক দেওয়া আবখক। অথচ, সমাজ নারীর ভুল-ভ্রাস্তি এক পাইও ক্ষমা করিবে না, পুরুষের ষোল-আনাই ক্ষমা করিবে। হেতু ? হেতু শুধু গায়ের জোর। হেতু শুধু সমাজ অর্থে পুরুষ’, ‘নারী নয় বলিয়া । কাজটা ঘূণার কাজ, তাই পুরুষ নারীকে ঘৃণা করে। তাহাকে ঘৃণা করিবার অধিকার দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু নারীকে সে অধিকার দেওয়া হয় নাই। পুরুষ যতই ঘৃণ্য হউক, সে স্বামী স্বামীকে ঘৃণা করিবে স্ত্রী কি করিয়া ? শাস্ত্র যে বলিতেছেন, তিনি যেমনই হউন না, সতী স্ত্রীর তিনি দেবতা । এবং এই দেবতাটির মৃত্যু ঘটিলে র্তাহার পদপঙ্কজ ক্রেগড়ে করিয়া অনুগমন করা আবখক। অন্ততঃ এ-যুগে তাঁহারই পদপঙ্কজ স্মরণ করিয়া জীবন্মত হইয়া থাকাতেই যথার্থ নারীত্ব । কেহ কেহ বৈজ্ঞানিক তর্কের অবতারণা করিয়া বলেন, ভবিষ্যৎ বংশধরের ভালোমন্দ লক্ষ্য করিয়া দেখিলে নারীর ভুল-ভ্রান্তিতেই ক্ষতি হয়, পুরুষের হয় না। অথচ . চিকিৎসকেরাই বিদিত আছেন, কত কুলস্ত্রীকেই না অসতীর পাপ ও কুৎসিত ব্যাধিযন্ত্রণ ভোগ করিতে হয় এব; কত শিশুকেই না চিরক্কল্প হইয়া জন্মগ্রহণ করিতে হয়, এবং সার-জীবন ধরিয়া পিতৃ-পিতামহের দুষ্কৰ্ম্মের প্রায়শ্চিত্ত করিতে থাকে। অথচ, শাস্ত্র এ-সম্বন্ধে অস্পষ্ট, লোকাচার নির্বাক্, সমাজ মৌন। তাঁহার প্রধান কারণ এই যে, শাস্ত্র-বাক্যগুলা সমস্তই প্রায় ফাক আওয়াজ। পুরুষের ইচ্ছা এবং ৩৬৬