পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চন্দ্রনাথ

থাকে, তাহলে যা সাধ্য সংশোধন করে ফণীকে পাঠাব—”। ঐ বছরের ২৬ এপ্রিল তিনি উপেন্দ্রনাথকে লিখেছেন: “শুধু একটা চন্দ্রনাথ লইয়া এত হাঙ্গামা। অথচ, সেটা যে কি রকম ভাবে ফণী পালের কাগজে বার হবে ঠিক বুঝিতে পারিতেছি না।

 “তোমরা সব দিক না বুঝিয়া সব দিক না সামলাইয়া হঠাৎ একটা বিজ্ঞাপন দিয়া অনেকটা নির্ব্বোধের কাজ করিয়াছ। এবং তাহারি ফল ভুগিতেছ। দোষ তোমাদেরি—আর বড় কারু নয়। ফণী পালের জন্য তুমি কতকটা যে false position-এ পড়িয়াছ তাহা প্রতি পদে দেখিতে পাইতেছি।

 “আমি আরও বিপদে পড়িয়াছি। একে আমার একেবারে ইচ্ছা নয়, ‘চন্দ্রনাথ, যেমন আছে তেমনি ভাবে ছাপা হয়, অথচ সেটা খানিকটা ছাপা হয়েও গেছে। আবার বাকীটাও হাতে পাই নাই। সুরেনের বড় ভয়, পাছে ও জিনিসটা হারিয়ে যায়। ওরা আমার লেখাকে হৃদয় দিয়া ভালবাসে–বোধ করি তাই এদের এত সার্থকতা।”

 মে মাসে (১৯১৩) উপেনবাবুকে অপর একটি পত্রে লিখেছেন: “আমি ত ‘চন্দ্রনাথ’কে একেবাবে নূতন ছাচে ঢালবার চেষ্টায় আছি, অবশ্য গল্প (plot) ঠিক তাই থাকবে।”

 যমুনা সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ পালকে ২ ফেব্রুয়ারী (১৯১৩) শরৎচন্দ্র লেখেন, 'চন্দ্রনাথ’ নিয়ে কি একটা বোধ করি হাঙ্গামা আছে তাই বলি ওতে আর কাজ নেই। * * * চন্দ্রনাথ আর চাইবেন না। যদি দরকার হয় আমি আবার লিখে দেব। সে লেখা ভাল বই মন্দ হবে না”। অপর একটি পত্রে ফণীন্দ্রনাথকে লেখেন: “চন্দ্রনাথ লইয়া ভারী গোলমাল হইতেছে। না জানিয়া হাতে না পাইয়া এইসব বিজ্ঞাপন প্রভৃতি দেওয়া ছেলেমানুষির একশেষ। তাহারা সমস্ত বই ‘চন্দ্রনাথ’ দিবে না; এজন্য মিথ্যা চেষ্টা করিবেন না। তবে, নকল করিয়া একটু একটু করিয়া পাঠাইবে। অনেক ভুলভ্রান্তি আছে, সেগুলি সংশোধন করিতে যদি পাই ত ছাপা হতে পারে, অন্যথা নিশ্চয় নয়। * * * যদি চন্দ্রনাথ বৈশাখেই শুরু হইয়াই গিয়া থাকে (অবশ্য সে অবস্থায় আর উপায় নাই) তাহা হইলেও আমাকে বাকীটা পরিবর্ত্তন পরিবর্জ্জন ইত্যাদি করিতেই হইবে। বৈশাখে যতটুকু বাহির হইয়াছে দেখিতে পাইলে আমি বাকীটা হাতে না পাইলেও খানিকটা খানিকটা করিয়া লিখিয়া দিব।

 “সেদিন গিরীনের পত্র পাই—তাঁহাদের সহিত উপীনের 'চন্দ্রনাথ’ লইয়া কিছু বকাবকির মত হইয়া গিয়াছে। তারা যদিও আপনার প্রতি বিরূপ নন, তত্রাচ এই ঘটনাতে এবং “কাশীনাথের” 'সাহিত্যে’ প্রকাশ হওয়া ব্যাপারে তারা 'চন্দ্রনাথ’ দিতে সম্মত নন। তাঁরা আমার লেখাকে বড় ভালবাসেন। হারিয়ে যায় এই ভয় তাদের। এবং পাছে আর কোন কাগজওয়ালা ওটা হাতে পায় এই জন্য সুরেন নকল করিয়া

৪১৫