পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পেরে সভার রিপোর্টারের মাথা ঘুরে গিয়েছিল, সে যা রিপোর্ট, লিখেছিল সেটা অমিতর বক্তৃতার চেয়েও অবোধ্য হয়ে উঠেছিল। তারই থেকে যে-ক’টা টুকরো উদ্ধার করতে পারলুম তাই আমরা উপরে সাজিয়ে দিয়েছি।)

 তাজমহলের পুনরাবৃত্তির প্রসঙ্গে রবি ঠাকুরের ভক্ত আরক্তমুখে বলে উঠল, ‘ভালো জিনিস যত বেশি হয় ততই ভালো।’

 অমিত বললে, ‘ঠিক তার উল্টো। বিধাতার রাজ্যে ভালো জিনিস অল্প হয় বলেই তা ভালো, নইলে সে নিজেরই ভিড়ের ঠেলায় হয়ে যেত মাঝারি যে-সব কবি ষাট-সত্তর পর্যন্ত বাঁচতে একটুও লজ্জা করে না তারা নিজেকে শাস্তি দেয় নিজেকে সস্তা করে দিয়ে। শেষকালটায় অনুকরণের দল চারি দিকে ব্যূহ বেঁধে তাদেরকে মুখ ভেঙচাতে থাকে। তাদের লেখায় চরিত্র বিগড়ে যায়, পূর্বের লেখা থেকে চুরি শুরু ক’রে হয়ে পড়ে পূর্বের লেখার রিসিভর্‌স্ অফ স্টোল্‌ন্ প্রপার্টি। সে স্থলে লোকহিতের খাতিরে পাঠকদের কর্তব্য হচ্ছে, কিছুতেই এই-সব অতিপ্রবীণ কবিদের বাঁচতে না দেওয়া—— শারীরিক বাঁচার কথা বলছি নে, কাব্যিক বাঁচা। এদের পরমায়ু নিয়ে বেঁচে থাক প্রবীণ অধ্যাপক, প্রবীণ পোলিটিশন, প্রবীণ সমালোচক।’

 সেদিনকার বক্তা বলে উঠল, ‘জানতে পারি কি, কাকে আপনি প্রেসিডেণ্ট করতে চান? তার নাম করুন।’

 অমিত ফস করে বললে, ‘নিবারণ চক্রবর্তী।’

 সভার নানা চৌকি থেকে বিস্মিত রব উঠল, ‘নিবারণ চক্রবর্তী! সে লোকটা কে?’

২১