পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অবৈজ্ঞানিক। Relativity of Names প্রচার করে আমি নামজাদা হব স্থির করেছি। তার গোড়াতেই জানাতে চাই, আপনার মুখে আমার নাম অমিতবাবু নয়।’

 ‘আপনি সাহেবি কায়দা ভালোবাসেন? মিস্টার রয়?’

 ‘একেবারে সমুদ্রের ও পারের ওটা দূরের নাম। নামের দূরত্ব ঠিক করতে গেলে মেপে দেখতে হয় শব্দটা কানের সদর থেকে মনের অন্দরে পৌঁছতে কতক্ষণ লাগে।’

 ‘দ্রুতগামী নামটা কী শুনি।’

 ‘বেগ দ্রুত করতে গেলে বস্তু কমাতে হবে। অমিতবাবুর বাবুটা বাদ দিন।’

 লাবণ্য বললে, ‘সহজ নয়, সময় লাগবে।’

 ‘সময়টা সকলের সমান লাগা উচিত নয়। একঘড়ি বলে কোনো পদার্থ ত্রিভুবনে নেই, ট্যাঁকঘড়ি আছে, ট্যাঁক অনুসারে তার চাল। আইন্‌স্টাইনের এই মত।’

 লাবণ্য উঠে দাঁড়িয়ে বললে, ‘আপনার কিন্তু স্নানের জল ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।’

 ‘ঠাণ্ডা জল শিরোধার্য করে নেব, যদি আলাপটাকে আরো একটু সময় দেন।’

 ‘সময় আর নেই, কাজ আছে।’ বলেই লাবণ্য চলে গেল।

 অমিত তখনই স্নান করতে গেল না। স্মিতহাস্যমিশ্রিত প্রত্যেক কথাটি লাবণ্যের ঠোঁটদুটির উপর কিরকম একটি চেহারা ধরে উঠছিল, বসে বসে সেইটি ও মনে করতে লাগল।

৫৪