পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R একদিন যে ভ্ৰমণ-কাহিনীর মাঝখানে অকস্মাৎ যবনিকা টানিয়া দিয়া বিদায় লইয়াছিলাম, আবার একদিন তাহাকেই নিজের হাতে উদঘাটিত করিবার আর আমার প্রবৃত্তি ছিল না। আমার সেই পল্লীগ্রামের যিনি ঠাকুর্দাদা তিনি যখন আমার সেই নাটকীয় উক্তির প্রত্যুত্তবে শুধু একটু মুচুকিয়া হাসিলেন, এবং রাজলক্ষ্মীর ভূমিষ্ঠ প্ৰণামের প্রত্যুত্তরে শু’। যেভাবে শশব্যাস্তে দুই পা হটিয়া গিয়া বলিলেন, তাই নাকি ? আহাঁ বেশ বেশ - বেঁচে-বৰ্ত্তে থাকে ! বলিয়া সকৌতুকে ডাক্তারটিকে সঙ্গে করিয়া বাহির হইয়া গেলেন, তখন রাজলক্ষ্মীর মুখের যে ছবি দেখিয়াছিলাম সে ভুলিবার বস্তু নয়, ভুলিও নাই ; কিন্তু ভাবিয়াছিলাম। সে আমারই একান্ত আমার-বহিজগতে তাহার যেন কোন প্ৰকাশ কোন দিনই না থাকে-কিন্তু এখন ভাবিতেছি এ ভালই হইল যে সেই বহুদিবসেব বন্ধ দুয়ার আবার আমাকে আসিয়াই খুলিতে হইল। যে অজানা বহস্তের উদ্দেশে বাহিরের ক্রুদ্ধ সংশয় অবিচারের রূপ ধরিয়া নিরন্তর ধাক্কা দিতেছে, এ ভালই হইল যে সেই অবরুদ্ধ দ্বার নিজের হাতেই অৰ্গলমুক্ত কবিবার অবকাশ পাইলাম । ঠাকুর্দাদা চলিয়া গেলেন, রাজলক্ষ্মী ক্ষণকাল স্তব্ধভাবে তাহার দিকে চাহিয়া রহিল, তার পরে মুখ তুলিয়া একটুখানি নিস্ফল হারির চেষ্টা করিয়া বলিল, পায়ের ধূলো নিতে গিয়ে আমি ভঁাকে দুয়ে ফেলতুম না ; কিন্তু কেন তুমি ও-কথা বলতে গেলে ? তার ত কোন দরকার ছিল না ! এ শুধু বাস্তবিক এ শুধুই কেবল আপনাদের আপনি অপমান করিলাম । ইহার কোন প্রয়োজন ছিল না। বাজারের বাইজী অপেক্ষা বিধবা-বিবাহের পত্নী যে ইহাদের কাছে উচ্চ আসন পায় না-সুতরাং নীচেই নামিলাম, কাহাকেও এতটুকু তুলিতে পারিলাম না, এই কথাটাই বলিতে গিয়া রাজলক্ষ্মী আর শেষ করিতে পারিল না ।