পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S àţe কোন পক্ষ হইতেই তাহার সুবিধা হইবে না । হইলও না । অতএব আমি আমার নিরালা ঘরে পুরাতন আলস্যের মধ্যে এবং সে তাহার ধৰ্ম্মকৰ্ম্ম ও তন্ত্ৰ-মন্ত্রের নবীন উদ্দীপনার মধ্যে ক্রমশঃই যেন পৃথক হইয়া পড়িতে লাগিলাম । আমার খোলা জানলা দিয়া দেখিতে পাইতাম সে রৌদ্রতপ্ত শুষ্ক মাঠের পথ দিয়া দ্রুত পদক্ষেপে মাঠ পার হইয়া যাইতেছে। একাকী সমস্ত দুপুর-বেলাটা যে আমার কি করিয়া কাটে, এদিকে খেয়াল কবিবার সময় তাহার ছিল না-সে। আমি বুঝিতাম ; তবুও যতদূর পর্য্যন্ত তাহাকে চোখ দিয়া অনুসরণ করা যায়, না করিয়া পারিতাম না । পায়ে-হঁাটা আঁক-বাক পথের উপর তাহার বিলীয়মান দেহলতা ধীরে ধীবে দূৰান্তবালে কোন এক সময়ে তিরোহিত হইয়া যাইত-অনেকদিন সেই সময়টুকুও যেন চোখে আমাব ধরা পড়িত না মনে হইত। ওই একান্ত সুপবিচিত চলনখানি যেন তখনও শেষ হয় নাই-সে যেন চলিয়াই চলিয়াছে হঠাৎ চেতনা হইত। হয়ত চোখ মুছিয়া আব্ব একবার ভাল করিয়া চাহিয়া দেখিয়া তাহার পাবে বিছানায় শুইয়া পড়িতাম-নয়ত নিমীলিত চক্ষে নিঃশব্দে পড়িয়া থ্যকিতাম, অদূৰবৰ্ত্তা কয়েকটা খৰ্ব্ববাকৃতি বাবলাগাছে বসিয়া ঘুঘু ডাকিত, এবং তাহারি সঙ্গে মিলিয়া মাঠের তপ্ত বাতাসে কাছাকাছি ডোমেদেব কোন একটা বঁাশঝাড় এমনি একটা একটানা ব্যথা-ভরা দীর্ঘশ্বাসের মত শব্দ করিতে থাকিত যে মাঝে মাঝে ভুল হইত, সে বুঝি বা আমার নিজের বুকের ভিতর হইতেই উঠিতেছে। ভয় হইত, এমন বুঝি বা আর বেশি দিন সহিতে পারিব না। রতন বাড়ী থাকিলে মাঝে মাঝে পা টিপিয়া ঘরে ঢুকিয়া আস্তে আস্তে বলিত, বাবু একবার তামাক দেব কি ? এমন কতদিন হইয়াছে, জাগিয়াও সাড়া দিই নাই, ঘুমোনোর ভাণ করিয়াছি ; ভয় হইয়াছে পাছে সে আমার মুখের উপর বেদনার ঘুর্ণাগ্ৰ আভাসও দেখিতে পায়। প্রতিদিনের মত সেদিনও দুপুর-বেলায় রাজলক্ষ্মী সুনন্দার বাটীতে চলিয়া গেলে সহসা আমার বাল্মার কথা মনে পড়িয়া বহুকালের পরে অভয়াকে একখানা চিঠি লিখিতে বসিয়াছিলাম। ইচ্ছা ছিল, যে ফাৰ্ম্মে কাজ করিতাম, তাহার বড়সাহেবকেও একখানা পত্ৰ লিখিয়া খবর লইব । কি খবর লইব, কেন