পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড কাছাড়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের শিক্ষক ছিলেন; এই জন্য তিনি চাপঘাট পরগণা হইতে কতক ভূমি প্রাপ্ত হন। উক্ত ব্ৰহ্মত্র ভূমি “ভটের-চক" নামে খ্যাত হইয়া অদ্যাপি তদ্বংশীয়গণের অধিকারে আছে। বিদুষী—এই কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রে নয়াগ্রামে বাণেশ্বর ভট্টাচার্য্যের সহধর্মিনী অপূর্ণাদেবী জ্যোতিঃশাস্ত্রে সুপণ্ডিতা ছিলেন। সৰ্ব্বসাধারণে তিনি “দ্বিতীয় খনা" বলিয়া কথিত হইতেন। এ বংশীয় তারাকান্ত তর্করত্ন নবদ্বীপে টোল স্থাপন পূৰ্ব্বক বহুকাল অধ্যাপনা করেন। নয়াগ্রামের রামভদ্র ভট্টাচাৰ্য্য তন্ত্র, জ্যোতিষ ও সঙ্গীত শাস্ত্রে বিশেষ খ্যাতি অৰ্জ্জন করিয়াছিলেন। তিনি আয়ুৰ্ব্বেদ ও ধনুৰ্ব্বেদও আলোচনা করিতেন। এসকল মহাত্মাদের আবির্ভাবেই পঞ্চখণ্ডের গৌরব। যে দেশ বিদ্বজ্জন সমলকৃত, সে দেশের গৌরব কে না করে? স্বণ কৌশিক গোত্রীয়গণ স্বর্ণ কৌশিক গোত্রীয় জনাৰ্দ্দন মিশ্র মিথিলা হইতে শ্রীহট্টে আগমন করেন; সে বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে বর্ণিত হইয়াছে। পরিশিষ্টে জনাৰ্দ্দনের একটি বংশধারা দেওয়া যাইবে । তদ্বংশে ২০শ ও ২১শ পর্য্যায়ে শ্রীপতি বিদ্যার্ণব ও গঙ্গাধর সাৰ্ব্বভৌম এবং ২৭শ পর্যায়ে ব্ৰজগোবিন্দ ন্যায়ালঙ্কার প্রভৃতি ব্যক্তি ক্ষণজন্ম পুরুষ ছিলেন।১৪ এবংশে উদ্ভুত রঘুনাথ তর্কবাগীশ ও তৎপুত্র হইতে পঞ্চখণ্ডের স্বর্ণকৌশিকগণ বিশেষ গৌরবান্বিত হইয়াছেন। রঘুনাথের পুত্রের নাম মধুসূদন ভট্টাচাৰ্য্য, মধুসূদন তন্ত্রশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন, তাহার ধৰ্ম্মনিষ্ঠা ও দেবভক্তি অনন্য সাধারণ ছিল, তিনি ইষ্টচিন্তা ও ভগাবদৰ্চ্চনায় তন্ময় থাকিতেন। একদা এক অলৌকিক মহাপুরুষ তাহার প্রদত্ত উপহার গ্রহণ করিয়াছিলেন।১৫ ইনি যে তদীয় আচ্চনায় বস্তু, তাহার ব্যবহারে তাহা জানা গিয়াছিল। এই শ্লোকটি কবি প্যারী চরণের"শ্রীহট্ট লক্ষীর হাট আনন্দের ধাম; স্বর্গাপেক্ষা প্রিয়তর এ ভূমির নাম; জন্মভূমিতেই ইহা আমার নিকটে জিনিয়া ত্ৰিদশালয় গৌরব প্রকটে ।” ইতি বাক্য স্মরণ করাইয়া দেয় । ১৩. মহেশ্বর ন্যায়ালঙ্কারকে এ দেশের কেহ কেহ বঙ্গ গৌরব রঘুনাথ শিরোমনির মহোদয় বলিতে নিষেধ করেন, তাহা যে একান্ত ভিত্তি শূন্য, জগদীশের ছাত্র যে রঘুনাথের সহোদর হইতে পারেন না, রঘুনাথ যে মহেশ্বরের পূৰ্ব্ববর্তী ছিলেন, তাহা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৭/৮ম অধ্যায়ের টীকাধ্যায়ে বলা গিয়াছে। এস্থলে পুনরুল্লেখ অনাবশ্যক । ১৪. ইহাদের বংশ-তালিকা জ পরিশিষ্টে দ্রষ্টব্য। ১৫. মধুসূদন ভট্টাচার্য ও ব্যাদিত-বদন মহাপুরুষ কথিত আছে যে, মধুসূদন জগন্নাথ নীলাচলে স্বীয় মাতৃদেবীসহ যাইতে ইচ্ছা করিয়া, তাহার উদ্যোগ করিতে ছিলেন । এমন সময় এক বিচিত্র স্বপ্ন দর্শন করেন। দেখেন যে তাহার ইষ্টদেব দারুব্ৰক্ষ রূপী জগন্নাথ আবির্ভূত হইয়া বলিতেছেন-“মধুসূদন, ক্ষেত্রে গিয়া তোমার প্রয়োজন নাই, তোমার ভক্তিবশে আমি তোমার দ্বারে আবদ্ধ। তোমার বিশ্বাস হইতেছে না? “অমুক" দিনে আমি একথার প্রমাণ দিব” স্বপ্নটি ভাঙ্গিয়া গেল । স্বপ্নটি অদ্ভূত হইলেও ইহা এতাদৃশ সুস্পষ্টরূপে দেখিয়াছিলেন যে তিনি হইতে কিছুমাত্র অবিশ্বাস না করিয়া, ভগবাদাদেশ বলিয়া জ্ঞান করিলেন ও ভক্তি সহকারে সেই নির্দিষ্ট দিনের অপেক্ষা করিতে লাগিলেন; তীর্থযাত্রা আপাততঃ স্থগিত হইল। ক্রমে সেই দিন সমাগত হইল, মধুসূদন সাধ্যমত উত্তমভোজ্য দ্রব্য, সুগন্ধ কুসুমহার প্রভৃতি অনুরাগভরে দেবগৃহে নিয়া রক্ষা করতঃ নিতান্ত সমাপন পূৰ্ব্বক একচিত্তে চিন্তামণির চিন্তা করিতে লাগিলেন।