পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় : পঞ্চখণ্ডের ব্রাহ্মণগণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৩৯ হাজঙ্গ জাতি ও বৈষ্ণবধৰ্ম্ম ময়মনসিংহের উত্তরপৰ্ব্বে প্রান্তস্থ (শ্রীহট্টের প্রায় সংলগ্ন ) সুসঙ্গদুর্গাপুর নামক স্থানে হাজঙ্গ জাতীয় যে সকল পাৰ্ব্বত্যলোকের বাস, তাহাদের আচার ব্যবহার দেখিলে আশ্চৰ্য্যান্বিত হইতে হয়। হাজঙ্গেরা গারো প্রভৃতি পাৰ্ব্বত্য জাতি হইতে বিশেষ ভিন্ন নহে এবং আচার ব্যবহারে সৰ্ব্বত্রই ইহাদের অনুরূপ। কিন্তু সুসঙ্গ-দুর্গাপুরের হাজঙ্গদের অবস্থা তদ্রুপ নহে; ইহাদের গৃহগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, অঙ্গন সৰ্ব্বদা গোময় লিপ্ত এবং প্রত্যেক বাড়ীতেই তুলসী বৃক্ষ রোপিত আছে। ইহারা বিনীত এবং অতিথি পূজাপরায়ণ, জীব হিংসা না করিয়া কৃষিবৃত্তি দ্বারাই জীবিকা নিৰ্ব্বাহ করে। সুসঙ্গ-দুর্গাপুরের হাজঙ্গগণ বৈষ্ণব ধৰ্ম্মাবলম্বী; মৃদুঙ্গ করতাল সহ সঙ্কীৰ্ত্তন করাও তাহদের মধ্যে অপরিজ্ঞাত নহে। এমন কি তাহদের কেহ কেহ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতোক্ত গুরু ও পঞ্চতত্ত্ব প্রণামাদি শ্লোক বংশানুক্রমেও জানে ও বলিতে পারে। তাহারা জন্মাষ্টমী, রাস ও দোলযাত্রা প্রভৃতির অনুষ্ঠানও করিয়া থাকে। ইহাদের মধ্যে যাহাঁদের খ্যাতি অধিকারী, তাহদের গৃহে শ্রীবিগ্রহ স্থাপিত আছেন,-অধিকাংশ মূৰ্ত্তিই রাধাকৃষ্ণ অথবা গোলাপের (২৬ ফলতঃ ইহারা আচার ব্যবহার ও ধৰ্ম্মে সৰ্ব্বতোভাবে বৈষ্ণব। আজকাল বৈষ্ণব হয় নাই—পুরুষানুক্রমে বৈষ্ণব । এই অঞ্চলের হাজঙ্গেরা ঈদৃশ ভাব ও ধৰ্ম্ম কোথায় পাইল? ইহা অল্প অনুশীলনের এবং বাঙ্গালীর অনুকরণের ফল নহে, তাহা হইলে বাঙ্গালী-পল্লীর সন্নিকটবৰ্ত্তী অপর পাৰ্ব্বত্য জাতিরাও এইরূপ আচার বিশিষ্ট হইত। কোনও পাৰ্ব্বত্য জাতীয় ব্যক্তিকে তাহার চিরাচরিত প্রাচীন সংস্কার ও আচার ত্যাগ করান সামান্য শক্তির কার্য্য নহে। হয় স্বয়ং শ্ৰীমহাপ্ৰভু ঐ স্থানে গমন করায় তাহার প্রভাব এই বন্য প্রদেশেও অমৃত-বন্যা প্রবাহিত করিয়াছে; নয় কোন শক্তিমান বিশিষ্ট ভক্ত দ্বারা ইহারা পবিত্রীকৃত হইয়াছে। পূৰ্ব্ববঙ্গ ভ্রমণ প্রসঙ্গে শ্ৰীমহাপ্রভুর শ্রীহট্টাগমন কালে এই স্থানে যাওয়ার কথা উল্লেখ নাই।২৭ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যেদয়াবলীতে সন্ন্যাসের পরে তাহার শ্রীহট্টাগমন বাৰ্ত্তা যেরূপ বর্ণিত হইয়াছে, তাহার ভাবে এমত বুঝা যায় না একদা ব্যতীত তিনি পথে কোথাও কিয়ৎক্ষণ অবস্থিতি করিয়াছিলেন। রসতত্ত্ববিলাসের বর্ণনানুসারে শ্ৰীমহাপ্রভুর আজ্ঞাবলে যখন শ্রীহট্টবাসী মাধব দাস ও রামদাসের উত্তরদিকে ধৰ্ম্ম প্রচারের সংবাদ পাইতেছি, তখন ইহারাই গারুঙ্গ জাতির উদ্ধার কৰ্ত্তা, তাহাই সম্ভবপর বলিয়া বোধ হইতেছে। সুসঙ্গ দুর্গাপুর শ্রীহট্টের প্রায় সংলগ্নভাবে উত্তরাংশেই বটে ॥২৮ প্রায় চারশত বৎসর পূৰ্ব্বে শ্ৰীমহাপ্ৰভু শ্রীহট্টে আসিয়াছিলেন; তাহার আগমনের স্মৃতি ও চিহ্ন চারিশত বৎসরের ব্যবধানেও বিলুপ্ত হয় নাই। তাহার পিতৃ ও মাতৃভূমি শ্রীহট্ট (-বুরঙ্গা ২৬. সুসঙ্গ-দুর্গাপুর হইতে সেরপুরের হাজঙ্গেরা বৈষ্ণব হয়, তত্ৰত্য হাজঙ্গ বসতির মধ্যে অনেক গ্রামেই অধিকারীদের বাস ও শ্রীবিগ্রহ স্থাপিত আছেন। দাউধারা গ্রামের অধিকারীর গৃহে শ্ৰীগৌরনিতাই বিগ্ৰহ স্থাপিত । ২৭. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাদ্ধে উপসংহারাধ্যায়ে শ্রীচৈতন্য চরিত দ্রষ্টব্য। ২৮. তৎকালে সুসঙ্গ-দুর্গাপুর সরকার শ্রীহট্টেরই অন্তর্গত ছিল। এমন কি ১৭২২ খৃষ্টাব্দে পদ্মার পূৰ্ব্বতট-ভূমি “ভাটি চাকলা" ভুক্ত হয়, তন্মধ্যে ৫ম চাকলার পূৰ্ব্বাংশবত্ত অনেকটা স্থান, সুসঙ্গ-দুর্গাপুরের কিছুটা অংশ, শ্রীহট্ট ভুক্ত থাকা দৃষ্ট হয়। (শ্রীযুক্ত কেদারনাথ মজুমদার কৃত ময়মনসিংহের ইতিহাসেও ইহার উল্লেখ আছে ।