পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড এই তিন জনের মধ্যে কবিবল্লভ ও বাণীবল্লভের সন্তানগণ মাধবপাশা, মাদারকাদি প্রভৃতি স্থানবাসী। কবিবল্লভ নবিগঞ্জের সন্নিকটবৰ্ত্তী এক গ্রামবাসী হইয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে। কবিবল্লভ কবি ছিলেন; ইহার নামে পদ্ম পুরাণের ভণিতা পাওয়া যায় ৮ সৰ্ব্বকনিষ্ঠ রামশ্বেরের একমাত্র পুত্র মাধবানন্দ বাচস্পতি পঞ্চখণ্ডের কাউয়াকোণা নামক স্থানবাসী হন; কাউয়াকোণাই পরে শাহবাজপুর পরগণায় পরিণত হয়। পণ্ডিত মাধবানন্দ ভট্টাচার্যের বসতি-ভূমি অল্পকাল মধ্যেই শ্ৰীসম্পন্ন হইয়া উঠিয়াছিল, এই জন্য উহা ভট্টশ্রী নামে খ্যাত হয়। ভট্টশ্রী সাধারণতঃ ভাটাউশী নামে কথিত হইয়া থাকে ৯ মাধবানন্দের পুত্র গৌরীদাস শৰ্ম্মা কতক ব্ৰহ্মত্র ভূমি লাভ করিয়াছিলেন, উহা তদীয় পুত্র রামকান্ত ভট্টাচার্য্যের “তছরূপে" ছিল । সনন্দের মন্তব্যে গৌরীদাসের পৌত্রের নাম স্থলে “বৈছমে রমাকান্ত ভট্টাচাৰ্য্য" বলিয়া লিখিত আছে। রমাকান্ত শাহবাজপুর কতক ব্ৰহ্মত্র লাভ করিয়াছিলেন, উহা হইতে তিনি বার্ষিক ১৩০৯৬ কৌড়ি প্রাপ্ত হইতেন । রমাকান্তের তিন পুত্র, ইহাদের নাম রামজীবন শৰ্ম্মা, রামেশ্বর ও মথুরেশ্বর । ইহাদের সন্তানবর্গ হইতেই এই বংশের বিস্তৃতি ঘটে। রামজীবনের পুত্রের নাম গঙ্গারাম; শাহবাজপুর ও বাহাদুরপুরের চৌধুরীবর্গ হইতে তিনি পরগণার “রাজপণ্ডিতি” প্রাপ্তির অধিকার লাভ করেন। এই দলিল হইতে জানা যায় যে, তদীয় পিতামহ রমাকান্ত ভট্টাচাৰ্য পরগণার রাজপণ্ডিত নিযুক্ত হইয়াছিলেন।১০ ১১৪০ সালের একখানা সনন্দে ইহার নামে ১৭॥০ কাহন কৌড়ি আয়ের উপযুক্ত ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রদত্ত হইয়াছিল দৃষ্ট হয়। গঙ্গারামের পুত্রের নাম সোণারাম শৰ্ম্ম, তৎপুত্র শুকদেব সিদ্ধান্ত, ইহার পুত্রের নাম হীরাকান্ত ভট্ট, তৎপুত্র কৃষ্ণকান্ত তাহার পুত্র রাজকৃষ্ণ, তৎপুত্র পরম প্রবীণ শ্রীযুক্ত যোগীন্দ্র কুমার ন্যায়রত্ন হইতে আমরা এতদ্বিবরণ সংগ্ৰহ করিয়াছি। পরগণা-চাপঘাট, দেশমুখ্য বংশ মহারাষ্ট্র পরিত্যাগ চাপঘাটের দেশমুখ্য গণের আদি নিবাস মহারাষ্ট্র দেশে ছিল। গার্গ গোত্রীয় এই দেশমুখ্য গণের পূৰ্ব্বপুরুষ সদাশিব তত্ৰত্য মাউলী গ্রামে বাস করিতেন। মহারাষ্ট্র-পতির মন্ত্রীসমাজে তিনিও অন্যতম ছিলেন। মহারাজ শিবজীর পুত্র সাহু তাহার প্রতি কোন কারণে বিরক্ত হইয়া ৭. ইহার কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ৩য় ভাগ ১ম খণ্ড ৩য় অধ্যায়ে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখিত হইয়াছে এবং পরবত্ত ৪র্থ খণ্ডের ১ম অধ্যায়ে উক্ত হইবে । ৮. পরবত্ত ৪র্থ ভাগে নারায়ণ দেবের কথা প্রসঙ্গে কবিবল্লভের বিষয়ও কথিত হইবে। ৯. ভট্টশ্রী নামটি প্রাচীন কাগজপত্রে থাকিলেও সাধারণতঃ উহা প্রচলিত নহে। ১১৯০ সাল ১৫ই বৈশাখ তারিখ যুক্ত একখানা দলিলে দৃষ্ট হয় যে, তত্ৰত্য ব্রাহ্মণবর্গকে বিবাহাদতে “নবত (নহবত বাদ্য) করিবার জন্য" পরগণার চৌধুরী ও পুরকায়স্থদের অনেক ব্যক্তি অনুমতি দিয়াছিলেন, এই অনুমতি পত্রে ১৩ জন ব্যক্তির সাক্ষর আছে; এই দলিলে ব্রাহ্মণবর্গের ঠিকানা স্থলে “সাকীন মৌজে ভট্টশী” স্পষ্টাক্ষরে লিখিত আছে। ১০. রাজপণ্ডিতির অধিকার পত্র (অবিকল নকল) “শ্ৰীগঙ্গারাম চক্রবৰ্ত্তি সদাশয়েযু লিখিতং শ্রীসাহবাজপুরের চৌধুরিয়ান ও কানোনগোই ও পাটোয়ারিয়ান বর্গস্য পত্র মিদং কার্জ্যঞ্চ আগে আমরার পরগণা মজকুরেত পূৰ্ব্বে তুমার পিতামহের রাজপণ্ডিতি আছিল এখানেই আমরা রজাবন্দ হৈয়া তুমারে রাজপণ্ডিতি করহ এতদৰ্থে পত্র লেখিয়া দিলাম ইতি সন ১১৫০ সাল তাং ১ কাৰ্ত্তিক।" (এই দলিলের দক্ষিণ পার্শ্বে দস্তখত-"শ্রীমাহামদ ছাদনস, শ্ৰীফতে মাং মাহাম্মদস্য ও শ্রীরাঘব রাম দেবস্য, শ্ৰীগুলমাহাম্মদস্য" এবং একটি পারস্য দস্তখত আছে। উক্ত নাম চারিটি যথাক্রমে বাহাদুরপুরের জমিদার, শাহবাজপুরের জমিদার, লাউতার পুরকায়স্থ বাড়ু হুদার চৌধুরীর দস্তখত।)