পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : বড়লিখার পুরকায়স্থ কথা এবং প্রতাপগড়ের বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৮১ শ্রীহট্ট শহরের কবি রাসবিহারী দত্তের কবিতা ও তাহার কবিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও তুলনা চলিত। সরসতায়, সারল্যে, প্রাঞ্জলতায় প্রাচীন মহাজনী পদ হইতে তাহার পদ ভিন্ন বলিয়া বোধ করা যায় না। তাহার পদ মাধুর্যে মুগ্ধ হইয়া বৃন্দাবনের প্রসিদ্ধ পণ্ডিত গৌরশিরোমণি ও বৃন্দাবন চন্দ্র গোস্বামী প্রভৃতি মহাজনী পদের সহিত তদীয় পদাবলী গাইয়া আনন্দানুভব করিতেন।২৭ “পদরত্ন মালা” নামে ঐ পদগুলি তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্র কর্তৃক সংগৃহীত হইয়াছে। তদ্ব্যতীত সরল ংস্কৃত ভাষায় তাহার রচিত কয়েকটি স্তোত্র ও অষ্টকাদি আছে।২৮ প্রতাপগড়ের সরকার বংশ প্রতাপগড়ের বিবরণ সংসৃষ্ট বলিয়া জফরগড়ের মৈনা নিবাসী চৌধুরী বংশ বৃত্তান্ত এইমাত্র বর্ণন করিয়াছি। যে দুইটি বংশীয়, জমিদারবর্গ প্রতাপগড়ের প্রথমাধিকারী ছিলেন, তাহাদের প্রসঙ্গ পূৰ্ব্বাংশেই বিস্তারিতভাবে যথাস্থানে বিবৃত করা গিয়াছে। সে দুইটি বংশের মধ্যে অন্যতম হিন্দু জমিদারদের কৰ্ম্মচারীরূপে বর্ণয়িতব্য সরকার বংশের প্রসিদ্ধি । আটপুরুষ পূৰ্ব্বে পঞ্চখণ্ডের সুপাতলা গ্রামে সাহু কুলোৎপন্ন জগন্নাথ দাস নামক এক ব্যক্তি ছিলেন, ইহার পুত্রের নাম নবিরাম বা নবীন। নবিরামের বারাণসী ও সন্ধী নামে দুই পুত্র হয়। নবি ও বারাণসী উভয়ই ধনাৰ্জ্জনে প্রসিদ্ধ হইয়া উঠেন; ইহাদের নামে তাহাদের বংশীয়বর্গ আদ্যাপি পরিচিত হইয়া থাকেন। কবি সত্যরাম বারাণসীর পুত্র শোভারাম। শোভারামের পুত্র সত্যরাম পারস্য ও সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন, তাহার কবিত্ব শক্তিও ছিল । তিনি একদা কাৰ্য্যান্বেষী হইয়া কাছাড়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র নারায়ণের সভায় গমন করেন, মহারাজ তাহার পাণ্ডিত্য ও বুদ্ধির পরিচয় পাইয়া তাহাকে রাজ্যের দেওয়ান নিযুক্ত করেন; সত্যরাম রাজানুগ্রহে প্রসিদ্ধ ও ধনী হইয়া উঠেন। রাজ-কাৰ্য্যানুরোধে সৰ্ব্বদাই তাহাকে কাছাড়ে থাকিতে হইত, বাড়ী যাইবার অবকাশ ছিল না। এতাদৃশ গুরুতর কাৰ্য্যে থাকিয়াও তিনি বঙ্গভাষার সেবায় ক্রটি করেন নাই; তাহার কৃত অনেক "ধুয়া” বা “ধুরা” আছে। তদ্ব্যতীত তিনি “ঘাটু সঙ্গীত" রচনা করিয়া ছিলেন ॥২৯ সত্যরাম বহুদিন বাড়ীতে আসিতে কি, বাড়ীর বিশেষ তত্ত্বাবধান নিতে না পারায়,এদেশে ২৭. যদৃচ্ছাক্রমে অদ্ররিত একটি পদ এ স্থলে উদাহরণ স্বরূপ দিলামঃ “নীপমূলে সুন্দর শ্যামর চন্দ হেবইতে সহচর ভৈ গেনু ধন্দ । রোমাবলিগণ তৈখনে জাগি । বিহিপায়ে মাগল লোচন লাগি । বিহি যব না পূরল তাকর আশ । স্বেদছলে রোদন করু পরকাশ । প্রতিতনু ছাওল থরথরি কাপ । তৈখনে লোচন লোরহি ঝাপ । মনসুখে না হেরিনু সো মুখ চন্দ বৃন্দাবন পহু শুনি রহু ধন্দ।" চৌধুরী মহাশয় কোন কোন পদে বৃন্দাবন চন্দ্র প্রভুকে স্মরণ করিয়াছিলেন, এ পদেও তাহার নাম আছে। ২৮. করিমগঞ্জের সবডিভিশনেল অফিসার সাহেবের ১৯শ আগষ্ট ১৯১০ ইং লিখিত ১৩৪নং চিঠির উত্তরে যে বিবরণ প্রদত্ত হয়, তদৃষ্টে ইহার অনেকাংশ লিখিত হইয়াছে। কানুরাম চৌধুরীর কাহিনী পূৰ্ব্বাংশে প্রতাপগড়ের বিবরণ প্রসঙ্গে বর্ণিত হওয়ায়, তাহারও তদীয় পুত্র পৌত্রাদির কথা এস্থলে পরিত্যক্ত হইল। ২৯. বৈষ্ণব মহোৎসবে ভোজনকালে যে সকল পদাবলী মধ্যে মধ্যে উচ্চারিত হয়, তাহা ধুয়া বা ধুরী নামে খ্যাত । "ঘাটুসঙ্গীত" রাধাকৃষ্ণ লীলাত্মক গান। শ্ৰীযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেন কৃত "বঙ্গভাষা ও সাহিত্য" গ্রন্থে কবি সত্যরামের যে ঘাটুসঙ্গীত উদ্ধৃত হইয়াছে, তাহা এই কবিকৃত বলিয়াই বোধ হয়।